ধারাবাহিক তাফসির, পর্ব-৪

সাহাবাদের ঈমানের দৃঢ়তা ও এতিম-নারী অধিকারের আলোচনা

মুফতি আরিফ মাহমুদ হাবিবী
  প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:৫৪| আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৭
অ- অ+

প্রিয় পাঠক, পবিত্র রমজানে কোরআন শেখার ধারাবাহিক তাফসির আয়োজনে আজ আমরা কোরআনুল কারীমের চতুর্থ পারার গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবো ইনশাআল্লাহ।

আগের পর্ব: আল্লাহর রাস্তায় খরচের অপূর্ব দৃষ্টান্ত ও সদকা-সুদের পার্থক্য

চলুন তাহলে আমরা শুরু করি....

সূরা আলে ইমরানে যেসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে, তার মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার বিষয়টি অন্যতম। চতুর্থ পারার শুরুতে এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত পূণ্যের পূর্ণতায় পৌঁছতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস দান না করে। অর্থাৎ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য প্রিয় জিনিস কোরবান করা আবশ্যক।

এছাড়া চতুর্থ পারায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

কেবলা পরিবর্তন সম্পর্কে আহলে কিতাবদের জবাব

১. কেবলা পরিবর্তনের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাইতুল মাকদিসের পরিবর্তে কাবাকে কেবলা নির্ধারণ করেন তখন আহলে কিতাবরা হইচই শুরু করে দেয়। তারা বলতে থাকে— কাবার তুলনায় বাইতুল মাকদিস শ্রেষ্ঠ এবং এটাই ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ তায়ালার প্রথম ঘর। আল্লাহ তায়ালা কাবা শরিফের তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করে তাদের দাবি খণ্ডন করেন।

প্রথমত, ভূপৃষ্ঠে কাবা শরিফই প্রথম ইবাদতখানা।

দ্বিতীয়ত, কাবায় এমন কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়, যা তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলা মাকামে ইবরাহিম (জমজম ও হাতিম)।

তৃতীয়ত, যে-ব্যক্তি হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ হয়ে যাবে। গোটা বিশ্বে কাবার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোনো স্থাপনা নেই। আল্লাহ তায়ালা তা নির্মাণের হুকুম দিয়েছেন। জিবরাইল আলাইহিস সালাম তার নকশা প্রণয়ন করেছেন। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন তার রাজমিস্ত্রি। জোগালিয়া হিসেবে ছিলেন হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম।

গোটা বিশ্বে এ এমন এক ইবাদতখানা, যা জিয়ারত করার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর সফরের খরচ ও সামর্থ্য রাখে এবং তার হজ করার অন্যান্য শর্ত পাওয়া যায় তা হলে তখন তার হজ করা ফরজ। অকারণে কেউ হজ আদায়ে বিলম্ব করলে সে গুনাহগার হবে।

আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করা

২. মুসলমানদের হুকুম দেওয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা আবশ্যক সেভাবেই যেন ভয় করে, যেন তারা আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে। তারা যেন বিভক্ত না হয়ে যায়। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রকৃতভাবে আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর অনুসরণ করা, তার অবাধ্যতা না করা। সব সময় তাকে স্মরণ করা। তাকে না ভোলা। তার শোকর আদায় করা। নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা না করা।

উম্মতে মুহাম্মদি অন্যান্য উম্মতের তুলনায় বহুগুণে শ্রেষ্ঠ। তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হচ্ছে, আল্লাহ যেসব বিষয়ে ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন, তারা তার ওপর ঈমান আনার পাশাপাশি আমর বিল মারুফ (সৎকাজের আদেশ) ও নাহি আনিল মুনকার (অসৎকাজে বাধা প্রদান) করে থাকে, যা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও শরয়ি কর্তব্য।

হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে গণ্য হতে চায়, তার উচিত এই সংক্রান্ত আল্লাহর শর্ত পূরণ করা।

এই আয়াতে, যাতে মুসলিম উম্মাহর গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রতি তিনি ইঙ্গিত করেছেন। উম্মত যতদিন পর্যন্ত এই তিন গুণ আঁকড়ে থাকবে ততদিন তারা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবে। আল্লাহ না করুন, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ তিন গুণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় তা হলে সে এর ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করতে থাকো। অন্যথায় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর আজাব চাপিয়ে দেবেন। তখন তোমরা তার নিকট দোয়া করবে; কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল হবে না।

মুনাফিক ও কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব রাখা নিষেধ

৩. মুনাফিক ও কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত, তারা তোমাদের ক্ষতি করতে কোনোরূপ ত্রুটি করে না।

দ্বিতীয়ত, তারা মনেপ্রাণে চায় যে, ইহকাল ও পরকালের দিক থেকে তোমরা কষ্ট ও মুসিবতে আক্রান্ত হও।

তৃতীয়ত, তাদের চেহারা ও কথাবার্তা থেকে তোমাদের ব্যাপারে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা ঝরে পড়ে।

চতুর্থত, তারা মুখে যা বলে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষ অন্তরে লালন করে।

বদরযুদ্ধ

৪. মুনাফিকদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাতে নিষেধ করার কয়েক আয়াত পর বদরযুদ্ধের আলোচনা করা হয়েছে, যা ইসলামের সকল যুদ্ধের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা বীরত্ব ও সাহসিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এর মাধ্যমেই তারা স্বচক্ষে আল্লাহ তায়ালার গায়েবি মদদ প্রত্যক্ষ করেছেন। মুসলমানদের সংখ্যা অনেক কম ছিল; বরং তা না থাকার মতোই।

এই যুদ্ধে মুসলমানদের জন্য দুটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে: প্রথমত, অস্ত্রের আধিক্য ও জনবলের মাধ্যমে বিজয় অর্জন হয় না; বরং বিজয়ের মূল হচ্ছে ঈমান, দৃঢ় বিশ্বাস, ইসলামের অনুসরণ এবং তার উপর অবিচল থাকা।

দ্বিতীয়ত, মুসলমানরা যতদিন সত্যের উপর থাকবে এবং আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকবে ততদিন তারা আল্লাহর সাহায্য পেতে থাকবে।

৫. সূরা আলে ইমরানে উহুদযুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতায় বদরযুদ্ধের আলোচনা এসেছে; তবে এ সূরায় উহুদযুদ্ধের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। পঞ্চান্ন আয়াতজুড়ে সে আলোচনা করা হয়েছে। এসব আয়াতে পরাজয়ের কারণ ও রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলমানদের সতর্ক করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে। বিভিন্ন ভুলত্রুটি শুধরানো হয়েছে। তাদের প্রশংসা করা হয়েছে।

উহুদের যুদ্ধ

ইসলামের ইতিহাসের প্রতি যার সামান্য ধারণা আছে, তিনি জানেন যে, বদরযুদ্ধে কুরাইশরা লাঞ্ছনাকর পরাজয় বরণ করেছিল। তারা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মদিনা আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে বের হয়। তখন তাদের সৈন্যসংখ্যা ছিল তিন হাজার, যার মধ্যে দুইশ অশ্বারোহী, সাতশ পদাতিক ছিল। সাথে ছিল তিনশ উট ও পাঁচশ নারী।

কুরাইশদের তিন হাজার যোদ্ধার বিপরীতে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র সাতশত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে পঞ্চাশজনের এক বাহিনী পেছনের পাহাড়ে মোতায়েন করেন। সে পাহাড়কে জাবালুর রুমাত (তিরন্দাজদের পাহাড়) বলা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বিশেষভাবে বলে দেন যে, ‘জয়-পরাজয় যা-ই হোক, কোনোক্রমেই তোমরা এখান থেকে সরবে না। এমনকি যদি তোমরা দেখো যে, পাখিরা লাশের উপর চক্কর দিচ্ছে; তবু তোমরা এখান থেকে নড়বে না।’

মহান সিপাহসালার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজাহিদদের রণাঙ্গনে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছিলেন যে, কুরাইশরা সওয়ারি থেকে নেমে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে কুরাইশদের আটজন পতাকাবাহী নিহত হয়। এতে কুরাইশরা মনোবল হারিয়ে ফেলে। হজরত আলি, হজরত হামজা, হজরত আবু দুজানা প্রমুখ মুসলিম বীর মুজাহিদদের প্রবল আক্রমণে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মুশরিকদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। কুরাইশ-বাহিনীর পরাজয় দেখে জাবালুর রুমাতের তিরন্দাজরা নিজেদের অবস্থানস্থল ছেড়ে দেয়। দশজন মুজাহিদ ছাড়া সকলেই গনিমত জমা করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

খালিদ বিন ওয়ালিদ তখনও ইসলাম কবুল করেননি। তিনি তখন পেছন দিক থেকে আক্রমণ করার সুযোগ লুফে নেন। তিনি জাবালুর রুমাতের ওপর বিদ্যমান মুষ্টিমেয় তিরন্দাজের উপর প্রবল আক্রমণ করেন। মুসলিম বাহিনী এ আক্রমণের ব্যাপারে একেবারে উদাসীন ছিল। কুরাইশদের পলায়নরত পদাতিক বাহিনী এই আক্রমণের সংবাদ পেয়ে উলটো ফিরে আসে। তখন মুসলিম-বাহিনী দু-দিক থেকে আক্রমণের শিকার হয়। একটা ছোট্ট ভুলের কারণে মুসলমানদের জয় (সাময়িক) পরাজয়ে পর্যবসিত হয়।

এবারের দ্বিতীয় আক্রমণে মুশরিকদের সর্বমোট বাইশজন নিহত হয় আর সত্তর জন সাহাবি শহিদ হয়ে যান। শহিদদের সরদার হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুও এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কুরাইশ বাহিনী তখন এমন অবস্থানে ছিল যে, যদি আল্লাহ তাদের অন্তর ঘুরিয়ে না দিতেন তা হলে তারা গোটা মুসলিম বাহিনীই নিঃশেষ করে দিতে পারত। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অপূর্ণ বিষণ্নতা নিয়েই তারা মক্কায় ফিরে যায়।

মুনাফিকদের দোদুল্যমানতা

এ ঘটনায় মুনাফিকদের স্বভাবগত ওয়াসওয়াসা শুরু হয়ে যায়। যদি মুসলমানরা সত্যের উপরই থাকত তা হলে তো তারা পরাজিত হতো না। এ কারণে পঞ্চান্নটি আয়াতে উহুদযুদ্ধ সম্পর্কে পর্যালোচনা করার পর পঁচিশটি আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, যারা ফেতনা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করত না।

হামরাউল আসাদের যুদ্ধ

উহুদের শহিদদের দাফন করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন যে, মক্কার পথে কিছুদূর (রাওহা নামক স্থানে) যাওয়ার পর আবু সুফিয়ান ভুল বুঝতে পেরেছে। সে বুঝতে পারে যে, যুদ্ধের উদ্দেশ্য অর্জন করা ব্যতীত সে ফিরে এসেছে। নিজের সাথি-সঙ্গীদের তিরস্কারের কারণে সে এখন দ্বিতীয়বার মদিনায় আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে। এ সংবাদ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই কুরাইশদের ধাওয়া করে এগিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘সেসব মুজাহিদই এই পশ্চাদ্ধাবনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, যারা গতকালের জিহাদে অংশগ্রহণ করেছে।’

সাহাবায়ে কেরামের ঈমান ও ইয়াকিনের বিষয়টি খেয়াল করুন। এইমাত্র তারা সত্তরজন শহিদকে দাফন করে এলেন। জখম ও ক্লান্তির কারণে তারা ছিলেন বিপর্যস্ত। প্রিয়তম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তারা লাব্বাইক বলে হাজির হয়েছেন। অতি দ্রুত সফর করে তারা যখন মদিনার আট মাইল দূরে অবস্থিত হামরাউল আসাদে পৌঁছেন। আল্লাহ তায়ালা তখন মুশরিকদের অন্তরে ভীতি ঢেলে দেন। দ্রুত তারা মক্কায় ফিরে যায়। উক্ত স্থানের প্রতি লক্ষ রেখে একে হামরাউল আসাদের যুদ্ধ বলা হয়।

এই যুদ্ধের আলোচনাপ্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আহত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ এবং তার রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে তাদের মধ্যে যারা নেককার এবং পরহেজগার তাদের জন্য রয়েছে মহাপ্রতিদান।’ (১৭২)

সর্বদা আল্লাহকে স্মরণকারী মুমিন

* সুরা আলে ইমরানের শেষ রুকুতে ওইসব মুমিনের আলোচনা করা হয়েছে, যারা সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে। আসমান ও জমিনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে। (১৯০-১৯৫)

সূরার শেষে সফলতার চারটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। যথা:-

সবর: দীনের উপর অটল-অবিচল থাকা। দীন পালন করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হলে হীনম্মন্যতায় না ভোগা।

মুসাবারা: শত্রুর মোকাবেলায় তাদের চেয়ে অধিক সাহসিকতা প্রদর্শন করা এবং দৃঢ় ও অবিচল থাকা।

মুরাবাতা: দীনের শত্রুদের সাথে মোকাবেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা।

তাকওয়া: সর্বাবস্থায় সর্বত্র আল্লাহকে ভয় করা। (২০০)

এখান থেকে সুরা নিসা শুরু...

এটি মাদানি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৭৬। রুকু সংখ্যা: ২৪

নামকরণ

সূরা নিসার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ চতুর্থ পারায় পড়েছে। এই সুরাকে ‘বড় সূরা নিসা’ বলা হয়। আর ২৮ পারার সুরা তালাককে ‘ছোট সূরা নিসা’ বলা হয়। এ সূরায় যেহেতু নারীদের বিধান বেশি বর্ণিত হয়েছে, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সূরাতুন নিসা।

এ সূরার যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিধান চতুর্থ পারায় এসেছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বালেগ হলে এতিমদের অর্থ-সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া। এতিমরা বালেগ হওয়ার পর বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন হলে তাদের সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করতে হবে। তা আত্মসাৎ করা যাবে না। খারাপ মাল দিয়ে তাদের ভালো মাল নিয়ে নেওয়া যাবে না।

২. এতিম ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্পদের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য। তবে সাধারণত এতিম মেয়েদের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ বেশি করা হয়।

একাধিক বিয়ে ও বিজাতীয় সংস্কৃতি

৩. একসঙ্গে চারজন নারীকে বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে স্বামীর তাদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হতে হবে। তাদের মাঝে ইনসাফসম্মত আচরণ করতে হবে। স্বামী যদি এমনটি করতে না পারে, তা হলে একজন স্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

৪. একাধিক স্ত্রীর প্রচলন ইসলামের পূর্বেও ছিল। তবে তার কোনো সীমারেখা ছিল না। কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। স্ত্রীদের মাঝে সমতা ও ইনসাফ রক্ষা করা হতো না। এক ব্যক্তি দশ-দশজন স্ত্রী রাখতে পারত; বরং তার চেয়েও বেশি নারীকে বিয়ে করতে পারত। এরপর তাদের মধ্য থেকে যার ইচ্ছা তার অধিকার আদায় করত, যাকে ইচ্ছা তাকে ঝুলন্ত রাখত। তালাকও দিতো না কিংবা তার বৈবাহিক ও জীবনযাপনের অধিকারও আদায় করত না। এমন নারীদেরকে ‘জীবিত স্বামীর বিধবা স্ত্রী’ বলে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলাম তালাকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। হক আদায় করা ফরজ সাব্যস্ত করেছে।

ইউরোপীয় সভ্যতা; গোটা বিশ্ব আজ যার অনুসরণ করতে চাচ্ছে। কাগজে-কলমে তারা একাধিক স্ত্রী রাখাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এমনিতে যত নারীর সঙ্গে ইচ্ছা সম্পর্ক রাখাকে তারা দোষের মনে করে না। আফসোস এবং দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমাদের বহু নামধারী মুসলমান শিক্ষা ও চলনের দিক থেকে এই অভিশপ্ত সভ্যতার অনুসরণের চেষ্টা করছে।

নারীর মিরাস

৫. ইসলামের পূর্বে নারীদের মিরাস দেওয়া হতো না। আরবদের প্রবাদ ছিল আমরা এমন মানুষকে কেন সম্পদ দেব, যারা ঘোড়ায় সওয়ার হতে পারে না, তরবারি বহন করতে পারে না, দুশমনের মোকাবেলা করতে পারে না।

তারা এই মূর্খজনোচিত নীতির কারণে শিশু ও নারীদের নিবাস থেকে বঞ্চিত করত। ইসলাম এই জুলুম খতম করেছে। শিশু ও নারীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির হকদার সাব্যস্ত করেছে। নারীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে অংশ প্রদান তার প্রতি কোনো ইহসান নয়; বরং এটা তার অধিকার। (১১-১৪)

যাদের বিয়ে করা জায়েজ নয়

৬. নারীদের সাথে সদাচরণ এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তাদের অংশ সংক্রান্ত আলোচনার পর ওইসব নারীর আলোচনা করা হয়েছে, আত্মীয়তা, বৈবাহিক বা দুধসম্পর্কের কারণে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম। (২৩-২৪)

চলবে, ইনশাআল্লাহ...

লেখক: আলেম ও ওয়ায়েজ, খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মিরপুর-০১।

(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেন একটা মাফিয়া সংগঠন!
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন শফিকুল আলম
এসআই সুকান্তকে কারাগারে প্রেরণ 
চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর, আসছে ৩ দিনের ছুটি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা