১৭ই মার্চ: জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের এক শুভক্ষণের জন্ম

মার্চ মাস স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে- এই মাসের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই মাসে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। এই মাস এলে বাঙালি জাতি একটু বেশি আবেগপ্রবণ ও স্মৃতিকাতর হয়ে যায়। আবার সাহসের সঞ্চারও ঘটে। এই মাসে ২৫শে মার্চের কালরাত্রির নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এই মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। জাতীয় দিবস ২৬শে মার্চও এই মাসে। নারীর অধিকার সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এই মাসেই পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস। আমার মতে সবচেয়ে বেশি যে কারণে এই মাসকে আমরা স্মরণ করি তা হলো এই মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
১৭ই মার্চ। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এইদিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার বাবা মায়ের দেওয়া আদুরে নাম ছিল খোকা। কিশোর বয়সেই শেখ মুজিবের প্রতিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন-
‘যেখানে ঘুমিয়ে আছো,/শুয়ে থাকো বাঙালির মহান জনক তোমার সৌরভ দাও,/দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ শৌর্য আর অমিত সাহস টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে/আমাদের গ্রামগুলো তোমার সাহস নেবে নেবে/ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।’
বঙ্গবন্ধুর জন্ম, শৈশবকাল, স্কুল-কলেজ জীবন এবং সমগ্র জীবন ছিল আদর্শ এবং অনুকরণীয়। তাঁর সমগ্র জীবনকাল তিনি দেশ ও দেশের জণগণের জন্য ভেবেছেন। অন্যায় ও জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে লড়েছেন। ৭ই মার্চের ভাষণ দিতে বঙ্গবন্ধু সাধনা করেছেন। দেশের ও দেশের মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম এবং গঠনমূলক রাজনীতি করেছেন। বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্যই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এবং ওই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ভাষণটি তখনকার সময় থেকে একটি অন্যতম ঐতিহাসিক ভাষণ ও দিবস হয়েছে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮তে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভুথ্থান, আগরতলা মামলায় জড়ানো এবং ৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়- এসব বিষয়কে সাহস ও শক্তি হিসেবে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা শুরু হওয়ার আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। যা সত্যিই বাঙালি জাতির চিরন্তন অনুপ্রেরণা। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক ন্যায্য অধিকার আদায়ে তাঁর দূরদর্শী বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। ১০ লক্ষাধিক সংগ্রামী মানুষের সামনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের হয়রানি, জুলুম ও শোষণ এবং কামান-বন্দুক-মেশিনগানের হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই দিন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
তিনি ভাষণে কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করেন: ১) সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা ২) পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত ৩) সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো ৪) অত্যাচার ও সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য বাঙালিদের আহ্বান জানানো ৫) দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান ৬) নিগ্রহ ও আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান এবং বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা।আন্দোলনমুখর পরিস্থিতিতে ঘনিয়ে আসলে সবার দৃষ্টি ছিল ৭ই মার্চের দিকে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কী বলবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান? ভাবিয়ে তুলল পাকিস্তানের সামরিক চক্রকেও। কারণ তারা বুঝে গেছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশ পরিচালিত হচ্ছে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথায়। এই অবস্থায় ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যদি রেসকোর্সের জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন!
পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সরকারের তৎকালীন তথ্য কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিকের 'Witness to Surrender' গ্রন্থে তিনি লিখেছেন যে- পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠী চিন্তিত হয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নিল। ৭ই মার্চের একদিন আগে, অর্থাৎ ৬ই মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। জেনারেল ইয়াহিয়া ৬ই মার্চ তার দীর্ঘ টেলিফোন আলাপে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলার চেষ্টা করেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যেন এমন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন, যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় আর না থাকে।’ বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনুধাবনে ৭ই মার্চের আংশিক ভাষণ এখানে প্রাসঙ্গিকক্রমে তুলে ধরা হলো-
“আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলব, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর–নারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন- দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম।
আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।” ভাষণের একেবারে শেষে তিনি পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন- “প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের আংশিক ব্যাখ্যা করলে প্রতীয়মান হয়, তিনি সেদিন যুদ্ধের ঘোষণা যেমন পরোক্ষভাবে প্রদান করেন- আবার যুদ্ধে কীভাবে জয়ী হতে হবে, সে ব্যাপারেও বক্তব্য রাখেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের বৈধ সরকার প্রধানের মতো একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে সময় এমন ছিল যে, কোনো কোনো বিদেশি পত্রিকাও তখন জানিয়েছিল, ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ’৭১-এর ৫ই মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার এবং ৬ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৭ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ৬ মার্চ ’৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল (৭ই মার্চ) পূর্ব পাকিস্তানের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন।’
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লিখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গবেষক ও প্রকৌশলী সংগঠক তিনি লিখেছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭১-এর ৭ই মার্চ সরাসরি কেন স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, তার ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে তিনি নিজেই দিয়েছেন। ১৯৭২-এর ১৮ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে এনডব্লিউ টিভির জন্য দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭ই মার্চের ওই ঘটনা বর্ণনা করেন। ফ্রস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চান, ‘আপনার কি ইচ্ছা ছিল যে, তখন ৭ই মার্চ রেসকোর্সে আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেবেন?’ জবাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে এবং সভায় আমি ঘোষণা করি যে, এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’ ফ্রস্ট প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি বলতেন, আজ আমি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি, তো কী ঘটত?’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর দেন, ‘বিশেষ করে ওই দিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কেননা, বিশ্বকে তাদের আমি এটা বলার সুযোগ দিতে চাইনি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আঘাত হানা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি চাইছিলাম, তারাই আগে আঘাত হানুক এবং জনগণ তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’ইতিহাস প্রমাণ করে, ৭ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শতভাগ সঠিক কাজটিই করেছেন।
উল্লেখ্য, ওই ভাষণের ১৮ দিন পর ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা শহরে গণহত্যার মাধ্যমে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি জাতি ৯ মাসের যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয়। যার সুফল জনগণ ভোগ করছে। পরিশেষে ৭ই মার্চের ভাষণটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মোটা দাগে বাঙালি জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন।
৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা মূলত বাঙালি জাতিকে মোটাদাগে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে বাঙালি জাতি বের হতে পারবে না। আর তাই ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় যা ছিল ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মাত্র ১৯ দিন পর। আর তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে (কালরাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭শে মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২শে জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। মার্চ মাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের ও অভ্যুদয়ের মাস। পরিশেষে বলতে হয় বঙ্গবন্ধু, ৭ই মার্চ, ১৭ই মার্চ এবং ২৬ই মার্চ ও বাংলাদেশ এক সুতোয় গাঁথা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ।মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: কলামিস্ট, কবি ও আইন গবেষক

মন্তব্য করুন