৪০ জিম্মির বিনিময়ে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সোমবার কাতারে পৌঁছেছেন, যারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন। এই আলোচনায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ৪০ জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওই কর্মকর্তার আরও জানিয়েছেন, কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে এই আলোচনার চলতে পারে বলে অনুমান করছেন তিনি।
এদিকে রমজান মাসেরও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই শতাধিক ফিলিস্তিনি হতাহত হচ্ছেন। তবে আর রোজা শুরুর আগেই গাজা উপত্যকায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক বিশ্ব নেতা। এ বিষয়ে চলতি মাসের শুরুতে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্তত্বতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হয়। তবে দুইদিন ধরে বৈঠক হলেও, কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল এবং কায়রো ত্যাগ করেন হামাসের প্রতিনিধি দল। এতে কোনো ফলাফল ছাড়াই এ দফার যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ হয়েছে।
এবিষয়ে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এ দফার আলোচনায় তারা তাদের প্রস্তাব মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে উত্থাপন করেছেন এবং ইসরায়েলের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
নাইম বলেন, ‘নেতানিয়াহু কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় না এবং ইসরায়েলকে চুক্তিতে সম্মত হতে চাপ দেওয়ার বল এখন আমেরিকানদের কোর্টে।’
এদিকে কায়রোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা হামাসের দাবির কারণে অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। তবে তারা রমজানের আগে যুদ্ধবিরতির চুক্তির আশা একেবারে ত্যাগ করেননি। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ফের আলোচনা শুরু হতে পারে।
এদিন আলোচনা থমকে যাওয়ার কারণ হিসেবে হামাসের মুখপাত্র জিহাদ ত্বহা বলেছেন, ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, বাস্তুচ্যুতদের নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন ও ইসরায়েল যেসব এলাকায় আগ্রাসন চালিয়েছে সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি এবং নিশ্চয়তা দিতে অস্বীকার করেছে।’
একটি সূত্র এর আগে রয়টার্সকে বলেছিল, ইসরায়েল কায়রোতে তাদের কোনো প্রতিনিধিকে পাঠায়নি। তারা দাবি করেছিল, যেসব জীবিত এবং মৃত জিম্মি এখনো গাজায় আছেন তাদের তালিকা দিতে হবে। এরপর তারা আালোচনায় যোগ দেবে।
এদিকে নাইম বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া তাদের পক্ষে এটি অসম্ভব ছিল কারণ জিম্মিরা যুদ্ধের অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং পৃথক গোষ্ঠীর কাছে আটক।
অন্যদিকে মিশরীয় নিরাপত্তা সূত্র সোমবার বলেছে, তারা ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছাড়াই আলোচনা চালিয়ে গেলেও ইসরায়েলিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন ধরে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য তোড়জোড় চলছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছেন, ৪ মার্চের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হবে বলে আশা করেন তিনি। তবে রমজানের আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে গত মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেছেন ইসরায়েল, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক শেষে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মিসর ও কাতারের কর্মকর্তারা।
সেই বৈঠকেই হামাসকে ৪০ দিন যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিসর।
বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স বলছে, প্রস্তাবিত এই খসড়ায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার হাসপাতাল-রুটি-বিস্কুট-কেক তৈরির কারখানাগুলোর পুনর্গঠন ও নির্মাণ, প্রতিদিন উপত্যকায় ত্রাণবাহী ৫০০টি ট্রাকের প্রবেশ এবং গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের জন্য কয়েক হাজার তাঁবু পাঠানোর মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসবের পরিবর্তে নিজেদের কাছে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে নারী, ১৯ বছরের কম বয়সি কিশোর-কিশোরী, বয়স পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি এবং অসুস্থ- এমন ৪০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে হামাসকে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারীও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এমআর)