বগুড়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না ২৯ পণ্য

বগুড়া প্রতি‌নি‌ধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০২৪, ২২:২২

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরতে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার মতো সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না বগুড়ায়। ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্যের মূল্য তালিকা বাজারে সাটিয়ে বেচাকেনা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং না থাকায় সরকার নির্ধারিত পণ্যের দামের তালিকা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

সোমবার শহরের কলোনি, ফতেহ আলী এবং রাজাবাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এর আগে গত ১৫ মার্চ শুক্রবার সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে খুচরা বাজারে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল সবজির মতো ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়।

সরেজমিনে শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সোনালি মুরগির সরকার নির্ধারিত দর ২৬২ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, গরুর মাংস ৬৬৪ টাকার স্থলে বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকায়। ছাড়া সরকার ৯৮ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। এভাবে প্রতি কেজিতে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে মুগডাল মাষকলাই। মসুর ডাল খেসারি ডালও মিলছে না নির্ধারিত দামে। সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না সবজিও। মসলার বাজারেও একই অবস্থা। আদা প্রতি কেজি ১৮০ টাকার স্থলে বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকায়। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকার স্থলে ১৬০ টাকায়।

শহরের ফতেহ আলী বাজারে পণ্য কিনতে আসা তানী নামের এক ক্রেতা জানালেন, সত্যি বলতে যে দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার সেটা মানা হচ্ছে না। যে বাজারেই যান সবখানেই দাম বেশি। ফতেহ আলী বাজারে দাম এক রকম আবার খান্দার বাজারে আরেক রকম দাম। কোথাও দাম কমার চিহ্ন নেই। পণ্যের যে দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলেও জানান তিনি।

সাজেদুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা জানান, বাজারে সব পণ্যের দামই বেশি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হবে, দাম কমবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু ওই দামে তো কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সংগতি নেই। আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রির দাবি জানান এই ক্রেতা।

বগুড়ার মালগ্রামের পেয়ারা বেগম নামের এক বিধবা নারী ক্রেতা জানান, মাছ-মাংস বা মুরগির কেনার সামর্থ্য নেই বলে ফতেহ আলী বাজারে মুরগির পা কিনতে এসেছি। কিন্তু পায়েরও দাম বেশি। তাই না কিনেই ফিরে যাচ্ছি।

বগুড়ার ফতেহ আলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুরগির চামড়া ১২০ টাকা, পাখা ১৬০ টাকা, গিলা ১৮০ টাকা আর ব্রয়লার মুরগির পায়ের কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানি মো. মিলন হোসেন বলেন, দাম কমানোর পর থেকে বসুন্ধরা ছাড়া নতুন করে তীর, রূপচাঁদা তেল আমরা পাচ্ছি না। ছোলা বুট আমাদের কেনাই পড়ছে ১০৩ টাকা। আমরা তো ১০৫ টাকাতেই বিক্রি করবো।

আমরা যেখান থেকে মাল কিনি তারা যদি দাম না কমায় তাহলে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করবো?

মুরগী ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, কোম্পানি যা রেট দিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে আমাদের মাল বিক্রি করতে হয়। আমরা তো সরাসরি কোনো ফার্ম থেকে মুরগি কিনি না। আমরা কিনি কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানি যদি রেট কম দেয় তখন কম হবে। সরকার নির্ধারণ করেছে ঠিক আছে, কিন্তু কম দামের জন্য সরকার কোম্পানিগুলোকে বলতে হবে। তারা দাম কমালেই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

গরুর মাংস বিক্রেতা নূর আলম বলেন, গরু কেনাই পড়ছে আমাদের কেজি প্রতি ৭০০ টাকার উপরে সেখানে ৬৬৪ টাকা কেজিতে আমরা কীভাবে বিক্রি করবো? কম দামে বিক্রি করলে এই টাকা ভর্তুকি দেবে কে। সরকার বেধে দিলেই তো আমরা বিক্রি করতে পারবো না। দোকান বন্ধ রাখতে হবে তাহলে। হাটে গরুর দাম বেশি। লাখ টাকার গরু লাখ ৩০ হাজার টাকা। মাংসের বাজারের জন্য নতুন করে দাম নির্ধারণ করা উচিত। কারণ যে দাম বেঁধে দিয়েছে সেই দামে বিক্রি করা কখনই সম্ভব না।

বগুড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল ইসলাম রিজভী বলেন, আমরা মনিটরিং করছি। মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি এখনো অনেক খুচরা বিক্রেতা জানেও না। অনেক পাইকারও জানে না। এটা বাস্তবায়নে আরো -৩দিন সময় লাগবে। এরপরে যদি কেউ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি না করে তবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে। সদরে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। বাকি উপজেলাগুলোতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসাইন করে দেওয়া আছে বাজার মনিটরিং করার জন্য। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের মাঝে লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। ফেস্টুন দিয়ে দেবো বিভিন্ন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সরকার যেভাবে দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য।

বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করছে না। তারা বলছে তাদের কেনা বেশি পড়ছে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেনা বেশি পড়ছে এটা বললে তো হবে না। আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোথায় বেশি রাখছে, কারা বেশি রাখছে। যে বেশি রাখছে তার বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :