‘ভাই বাঁচান আমাগো ধইরা লইয়া যাইতাছে’
‘ভাই বাঁচান, আমাগো ধইরা লইয়া যাইতাছে। সারেগো পায়েও ধরছি তাও আমাগো সবাইরে কই যেন লইয়া যাইতাছে। আমি আর সারেগো এই এলাকায় আইতাম না ভাই। আপনে একটু সারেগো কইয়া আমাগো বাঁচান। আমার এই বাচ্চা মাইয়াডার ভবিষ্যৎ নষ্ট হইয়া যাইবো। আমি মাইনষের বাসায় কাম করমু তাও ভিক্ষা করমু না।’
কথাগুলো বলছিলেন বাসের জানালা দিয়ে শিশু মেয়েকে কোলে নিয়ে ইস্কাটন এলাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে আটক ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত আসমা খাতুন।
শুক্রবার দুপুরে অভিযানটি পরিচালনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান।
আসমা খাতুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি চাঁদপুর থেইকা ঢাকায় আসছি। এক ছেলে ও এই মাইয়াডারে লইয়া ঢাহায় থাহি। আমার জামাইর লগে কোনো সম্পর্ক নাই। মাইনষের বাসায় কাম কইরা আমি বাচ্চাগো মানুষ করতাছি। আইজকাই আমি এই প্রথম এই এলাকায় (ইস্কাটন) ভিক্ষা করতে আইছি। আর সারেরা আমারে ধইরা গাড়িতে উঠাইছে। কই যেন লইয়া যাইবো। হেরা নাকি আমাগো তাগো লগে রাখবো, খাওন দিবো। তয় বাসায় আমার পোলাডা একলা। আমারে লইয়া গেলে পোলাডারে কে দেখবো। পোলাডা আমারে না পাইলে মইরা যাইবো ভাই।’
আসমা আরও জানান, সারে ৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে তিনি বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকায় থাকায় থাকেন। অভাবের তাড়নায় তিনি ভিক্ষা করতে নেমেছিলেন। তবে এইবার তাকে ক্ষমা করলে তিনি এই পেশায় আর নামবেন না বলে জানায়।
রাজ্জাক নামের আরেক আটক ভিক্ষুক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সব সময় ভিক্ষা করিও না। দুইদিন ধইরা ভিক্ষা করতে নামছি। দেশে (গ্রামে) আমার অবস্থা ভাল। ঢাকায় আইসা কোন কাম না পাওনে মানসের থেইকে সাহায্য চাইতাছি। আমিতো আর ভিক্ষুক না। আমারে ছাইরা দিলে আমি গ্রামে চইলা জামু।’
রেশমা নামের আরেক ভিক্ষুক বলেন, ‘আমরাতো মাইনসের থেইকা জোড় কইরা টাহা নেই না। আমরা গরিব মানুষ তাই ভিক্ষা করি। রাস্তাঘাটে হিজলারা জোড় কইরা টাহা নেয় হেইডা চোহে পরে না। আমরা সাহায্য চাইয়া ভিক্ষা নেই এইডা আমাগো অপরাধ।’
ইস্কাটনে অভিযান চালিয়ে ২৯ জন ভিক্ষুককে আটক করা হয়েছে জানিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা অফিসার আকমল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, পুনর্বাসনের লক্ষে আমরা ইস্কাটনে অভিযানে চালিয়েছি। রমজান মাস এলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়।
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এইচএম/কেএ)