ধারাবাহিক তাফসির, পর্ব-১৩

চারিত্রিক পবিত্রতা ও ধৈর্য ধারণের পুরস্কার

মুফতি আরিফ মাহমুদ হাবিবী
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১১:২৮ | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২৩:৩৪

প্রিয় পাঠক, আজ আমরা কুরআনুল কারীমের ১৩ তম পারা থেকে ধারাবাহিক তাফসির জানবো ইনশাআল্লাহ।

আগের পর্ব: কোরআন অস্বীকারকারীদের প্রতি আল্লাহর চ্যালেঞ্জ

পূর্বের পারায় আমরা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাতু আসসালামের ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছি। এখন আমরা সেসব ঘটনা থেকে শিক্ষা, উপদেশ উল্লেখ করবো।

কখনো মুসিবতের সুরতে নেয়ামত আসে

১. কখনো কখনো মুসিবতের সুরতে নেয়ামত ও শান্তি আসে। ইউসুফ আলাইহিস সালামকে প্রথমে এক দীর্ঘ বিপদ-সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। তাকে কূপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সাথে কোনো সাহায্যকারী ছিল না। মিসরের গোলামদের সাথে তাকে বিক্রির জন্য ওঠানো হয়েছিল। তাকে নারীদের ফেতনা মোকাবেলা করতে হয়েছিল। অনেক বছর বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছিল। পরিশেষে তিনি মিসরের বাদশাহ বনে যান। দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত জীবন লাভ করেন।

হিংসা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রোগ

২. হিংসা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রোগ। আপন ভাইদের মধ্যে তা সৃষ্টি হলে দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হতে পারে।

উন্নত চরিত্র, উত্তম গুণাবলি ও সঠিক লালনপালনের ফল

৩. সর্বাবস্থায়ই উন্নত চরিত্র, উত্তম গুণাবলি, সঠিক লালনপালনের ফল ভালো হয়ে থাকে। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের লালনপালন হয়েছিল এক মহান পিতার হাতে, নবীবংশে। উত্তরাধিকারসূত্রে বাপ-দাদার থেকে তিনি মহৎ গুণাবলি লাভ করেছিলেন। উন্নত চরিত্র ও তরবিয়তের কারণেই বহু বিপদ- মুসিবতের সামনেও তিনি অবিচল ছিলেন, যার কারণে কষ্টের পর শান্তি এবং বাহ্য অপদস্থতার পর প্রকৃত সম্মানিত জীবন লাভ করেছেন।

সচ্চরিত্র, বিশ্বস্ততা ও দৃঢ়তা সবার জন্যই কল্যাণের উৎস

৪. নিষ্কলুষতা, আমানত ও ইসতিকামাত নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সবার জন্যই সকল কল্যাণের উৎস। দীনের উপর আমল করলে একদিন না একদিন অবশ্যই সম্মানিত জীবন অর্জিত হবে। সত্য যতই লুকিয়ে রাখা হোক, একদিন তা প্রকাশ পাবেই।

বেগানা নারী-পুরুষের নির্জনে অবস্থান ফেতনার কারণ

৫. বেগানা নারী-পুরুষের পরস্পর মেশামেশি ও নির্জনে একত্রে অবস্থান ফেতনার কারণ। এই কারণে ইসলাম (পরম্পর মাহরাম নয় এমন) নারী-পুরুষের নির্জনে অবস্থান হারাম ঘোষণা করেছে। তিরমিজি ও নাসায়ির হাদিসে আছে, নারী-পুরুষ যখন নির্জন জায়গায় একত্র হয় তখন তাদের সাথে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান উপস্থিত থাকে।'

ঈমান বিপদে সহনশীলতা ও গুনাহমুক্ত থাকা সহজ করে

৬. আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনয়ন ও দৃঢ় আকিদার মাধ্যমে বিপদ-আপদ সহ্য করা ও গুনাহ থেকে চরিত্র বাঁচিয়ে রাখা সহজ হয়ে যায়।

কষ্টের সময় আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন করা

৭. মুমিনের জন্য উচিত হচ্ছে, সকল কষ্ট-মুসিবত ও পেরেশানির সময় আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন করা। মিসরের বাদশাহর স্ত্রী মন্দ কাজ না করায় ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন জেলের হুমকি দিয়েছিল তখন তিনি গুনাহের পরিবর্তে বিপদকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। রবকে ডেকে বলেছিলেন, হে আমার রব, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করছে তার তুলনায় জেলই আমার নিকট উত্তম।

কিছু আল্লাহওয়ালার ব্যাপারে বর্ণিত আছে, অসুখ-বিসুখ ও বিপদ-আপদে আক্রান্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন তাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে তখন তারা বলেছেন, আল্লাহর প্রশংসা করছি, গুনাহে লিপ্ত হইনি, বিপদে আপতিত হয়েছি।

প্রকৃত দায়ী কষ্টের সময়ও দাওয়াত থেকে উদাসীন হয় না

৮. প্রকৃত দায়ী অনেক কষ্ট-মুসিবতের মধ্যেও দাওয়াতের দায়িত্ব থেকে উদাসীন হয় না। ইউসুফ আলাইহিস সালাম কারাগারে থেকেও দাওয়াত-তাবলিগ ও ইরশাদের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেননি। যে-ব্যক্তি তার নিকট স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল তাকেও তিনি তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। এরপর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলেছেন। বলা হয়, কারাগারের বন্দিরা তার দাওয়াতের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ঈমান এনেছিল। স্বয়ং মিসরের বাদশাহও ইসলাম কবুল করেছিল।

চারিত্রিক পবিত্রতার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা উচিত

১. সাধারণত সকল মুসলমানের আর বিশেষভাবে প্রত্যেক দায়ী এবং অনুসৃত ব্যক্তির স্বীয় চারিত্রিক পবিত্রতার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা উচিত। কয়েক বছর কারাগারে থাকার পর যখন ইউসুফ আলাইহিস সালামের মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন সাথে সাথেই তিনি বের হয়ে যাননি; বরং যতক্ষণ পর্যন্ত

তার চারিত্রিক পবিত্রতা ও নির্দোষিতার ঘোষণা ও স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কারাগার থেকে বের হতে রাজি হননি। তিনি এমন করেছিলেন, যাতে কেউ এই অপবাদ না লাগাতে পারে যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে অপরাধীই ছিলেন। অনুগ্রহবশত তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ধৈর্যধারণের ফজিলত

১০. এ ঘটনা থেকে ধৈর্যধারণের ফজিলত এবং তার উত্তম ফলপ্রাপ্তির ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম কূপের অন্ধকার থেকে নিয়ে জেলখানার একাকিত্ব পর্যন্ত এবং মিসরের বাদশাহর ঘর থেকে নিয়ে ভাইদের মাফ করে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি যে ফল লাভ করেছেন, তা কারও কাছেই গোপন নয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ধৈর্য হচ্ছে শান্তি ও নেয়ামতের দরজার চাবিকাঠি। তা ঈমানের অর্ধেক।' আল্লাহর সাহায্য লাভের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

ইউসুফ আলাইহিস সালামের পবিত্রতার সাক্ষ্য

১১. এই ঘটনার মাধ্যমে ইউসুফ আলাইহিস সালামের পবিত্রতা ও নির্দোষিতার সাক্ষ্য পাওয়া যায়।

প্রথম সাক্ষ্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে।

দ্বিতীয় সাক্ষ্য শয়তানের পক্ষ থেকে। কেননা শয়তান আল্লাহর সামনে শপথ করেছিল আপনার সম্মানের কসম, আপনার মুখলিস বান্দা ব্যতীত আমি সব মানুষকে বিভ্রান্ত করে ছাড়বো। ইউসুফ আলাইহিস সালাম মুখলিস ও মনোনীত বান্দা হওয়ার মধ্যে কি কোনো সন্দেহ হতে পারে? তাই তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করা শয়তানের বক্তব্য অনুযায়ীই অসম্ভব ছিল।

তৃতীয় সাক্ষ্য স্বয়ং ইউসুফ আলাইহিস সালামের। তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করে তার চেয়ে কারাগারই আমার কাছে উত্তম।

চতুর্থ সাক্ষ্য বাদশাহর স্ত্রীর, যখন তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, এখন সত্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমি তাকে ফুসলানোর চেষ্টা করেছি আর সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

পথম সাক্ষ্য যুলাইখার পরিবারের এক ছোট্ট শিশুর, তখনও যার কথা বলার বয়স হয়নি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ইউসুফ আলাইহিস সালামের পবিত্রতা প্রমাণের জন্য তাকে কথা বলার শক্তি দান করেন। সে বলেছিল, তার জামা যদি সামনের দিক থেকে ছেঁড়া হয় তা হলে সে সত্যবাদী আর ইউসুফ আলাইহিস সালাম (নাউজুবিল্লাহ) মিথ্যাবাদী। আর যদি জামাটির পেছন দিক ছেঁড়া হয় তা হলে যুলাইখা মিথ্যাবাদী আর ইউসুফ সত্যবাদী। পরে দেখা গেল, তার জামার পেছন দিক ছেঁড়া।

ষষ্ট সাক্ষ্য মিসরের সেসব নারীর, যারা নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল। তারা ইউসূফ আলাইহিস সালামের চারিত্রিক পবিত্রতার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছিল, ইউসুফের ব্যাপারে আমরা কোনো মন্দ বিষয় জানি না।

এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম পবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। এসব সত্ত্বেও যদি কোনো দুরাচারী তার প্রতি মন্দ কাজের সম্বন্ধ করে তা হলে তার চেয়ে বড় গণ্ডমূর্খ ও নির্বোধ কেউ হতে পারে না।

আল্লাহর ফয়সালা কেউ পরিবর্তন করতে পারে না

১২. আল্লাহ তায়ালা যদি কাউকে কষ্ট-মুসিবতে ফালানোর ফয়সালা করেন তা হলে কেউ এ ফয়সালা পরিবর্তন করতে পারবে না। তেমনিভাবে যদি কারও ব্যাপারে তিনি সম্মান ও ইজ্জতের ফয়সালা করেন তা হলে তা থেকেও তাকে কেউ বাধা দিতে পারবে না।'

নিম্নযুক্ত আয়াতের মাধ্যমে সুরা ইউসুফের সমাপ্তি টানা হয়েছে: 'এ ঘটনায় জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটা এমন কোনো কিতাব নয়, যা কেউ বানাতে পারে; বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ সত্যায়নকারী আর মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত।'

যেন এই দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে, যে মহান সত্তা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কুয়া থেকে বের করে সিংহাসনে বসাতে পারেন তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও সম্মানিত করতে পারেন। এবং তিনি তার আনীত ধর্মকে অন্যান্য ধর্মের উপর বিজয়ী করতে সক্ষম।

সুরা রাদ

এটি মক্কি সুরা। আয়াতসংখ্যা: ৪৩। রুকুসংখ্যা: ৬

এতে তিনটি মৌলিক আকিদা-তাওহিদ, নবুওয়াত ও পুনরুত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সুরার প্রথম আয়াতে কোরআনুল কারিমের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ভাববার বিষয় হল 'হরফে মুকাত্তায়াত' দ্বারা যেসব সুরার সূচনা হয়েছে, তার শুরুতে সাধারণত কোরআনুল কারিম সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়, যার মাধ্যমে এট বক্তব্যের সমর্থন হয় যে, যারা কোরআনকে মানবরচিত বলে দাবি করে এসব হরফের মাধ্যমে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে।'

এ সুরায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রদত্ত হল:

১. সুরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব এবং তার একত্ববাদের দলিল বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আসমান-জমিন, সূর্য-নক্ষত্র, দিন-রাত, পাহাড়ী পর্বত, নদনদী, শষ্যাদি, বিভিন্ন রং, স্বাদ ও ঘ্রাণযুক্ত ফল-ফলাদি তিনিই সঙ্গি করেছেন। জীবন-মৃত্যু, লাভ-ক্ষতি একমাত্র তার হাতে।

২. কেয়ামত দিবস, পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের বিষয়টি প্রমাণ করা হয়েছে। এটা এমন এক বিষয়, মুশরিকদের যা বোধগম্য হতো না। তারা আল্লাহর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করত, তাকে আসমান-জমিনের স্রষ্টা বলে মানতো; কিন্তু মৃত্যু- পরবর্তী জীবনকে তারা অস্বীকার করত।' তাদের এটা বোধগম্য হতো না যে, হাড্ডি মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পরও মানুষ দ্বিতীয়বার কীভাবে জীবিত হবে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, মৃত হাড্ডিতে আল্লাহ কীভাবে জীবন সঞ্চার করবেন মুশরিকরা এ ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করে; অথচ এটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়; বরং এ ব্যাপারে সন্দেহ হওয়াই প্রকৃত আশ্চর্যের কারণ। (৫)

৩. মানুষের হেফাজতের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা নির্ধারণ করে রেখেছেন। ৪. একটি মূলনীতি বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কোনো জাতির প্রতি তার আচরণ পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করে। কোনো সম্প্রদায় যখন নিজেরাই নিজেদের নেয়ামতের পরিবর্তে মুসিবত, অসুস্থতার পরিবর্তে সংকীর্ণতার উপযুক্ত বানিয়ে ফেলে আল্লাহ তায়ালা তখন তাদের সাথে সেরূপ ব্যবহারই করে থাকেন।

৫. বাতিল ও বাতিলপন্থিদের পানির স্রোতধারায় তৈরি হওয়া স্ফীত ফেনারাশির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা সব জিনিসের উপর ছেয়ে যায়। কিন্তু পরিশেষে তা নিঃশেষ হয়ে যায়। আর হক ও হকপন্থিদের সোনারুপার সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা জমিনে স্থির থাকে। এরপর আগুনের তাপে তা নিখাদ করা হয়।

তার ময়লা ইত্যাদি দূর করা হয়। (১৭) গোটা দুনিয়ায় বাতিলের যে আস্ফালন দেখা যাচ্ছে, তা আপনাতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে তাদের মোকাবেলায় হকপন্থিদের সত্যের উপর

অবিচল থাকতে হবে। অথচ বর্তমানে হকের নামধারীরা বাতিলপন্থিদের আর বাতিলপন্থিরা হকপন্থিদের পথ ও পন্থা অবলম্বন করছে।

৬. মুত্তাকি ও আল্লাহর বিধান পালনকারীদের কিছু গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১) তারা আল্লাহর সাথে কৃতঅঙ্গীকার পুরা করে। কখনো সেই অঙ্গীকার ভমাছের না।

২) আল্লাহ যাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।

৩) দ্বীয় প্রতিপালককে ভয় করে। পরকালের হিসাবকে ভয় করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবর করে। নামাজ কায়েম করে।

৪) আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদ থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করে।

৫) মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দেয়। (২০-২৪)

তাদের বিপরীতে হতভাগাদের তিনটি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, তারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তায়ালা যে সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম দিয়েছেন তারা তা বিনষ্ট করে।

তৃতীয়ত, তারা জমিনে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। (২৫)

৭. নবীরাও অন্যান্য মানুষের মতো মানুষ হয়ে থাকেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান থাকে। তারা যে মুজিজা প্রদর্শন করেন, তা তাদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা নয়; বরং আল্লাহর হুকুমেই তা করে থাকেন। মানুষ হওয়ায় যারা তাদের নবী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে, তারা নবুওয়াতের মর্যাদা সম্পর্কে অজ্ঞ।'

সে সুবার শেষাংশে আল্লাহ নিজে নবীর নবুওয়াত ও রিসালাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য সবার শেয়া আর বলেছেন, এমনিভাবে হঠকারিতামুক্ত আহলে কিতাবরাও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে।

সুরা ইবরাহিম

এটি মক্কি সুরা। আয়াতসংখ্যা: ৫২। রুকুসংখ্যা: ৭

হরফে মুকাত্তায়াত দ্বারা সুরাটির সূচনা হয়েছে। হরফে মুকাত্তায়াতযুক্ত অন্যান্য সুরার ন্যায় এ সুরার শুরুতেও কোরআনুল কারিমের আলোচনা এসেছে। এর প্রথম আয়াতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার হেকমত ও মাকসাদ বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ এমন এক কিতাব, যা আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি পরাক্রমশালী, প্রশংসনীয় সত্তার নির্দেশে মানুষদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন।

সুরা ইবরাহিমে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

১. মৌলিক আকিদা তথা তাওহিদ, রিসালাত, পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের উপর

ঈমান আনয়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ২. কাফেরদের নিন্দা করা হয়েছে। তাদেরকে জাহান্নামের ধমক দেওয়া হয়েছে। আর মুমিনদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। (২-২৩, ২৮-৩১)

৩. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, আপনার সম্প্রদায় আপনার সাথে যেমন আচরণ করছে, পূর্ববর্তী নবীদের সাথেও এমন আচরণ করা হয়েছিল। তারা তাদের নবীদের অস্বীকার করেছে। তাদের সাথে শত্রুতা করেছে। তাদের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে। (৯-১২; ১৩-১৮) এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী কয়েকজন নবীর নিকট তাদের মিথ্যাবাদী সম্প্রদায় যেসব আপত্তি উত্থাপন করেছিল তা উল্লেখ করেছেন।

তারা নবীদের দাওয়াতের উত্তরে চার ধরনের সন্দেহ পোষণ করেছিল। রাব্বুল আলামিনের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ। মুশরিকরা এ ব্যাপারে বলত, তুমি আমাদেরকে যে সত্তার প্রতি আহ্বান করছ, আমরা তার ব্যাপারে গভীর সন্দেহে নিপতিত রয়েছি।

সন্দেহের উত্তরে নবীগণ বলেছেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছ?' ৪র্থাৎ আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাওহিদের দলিল-প্রমাণ এতটাই সুস্পষ্ট যে, এ

ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দাঁড় করানোর প্রয়োজন নেই। বিশ্বজগতের প্রতিটি অনু-কণা, সকল ধরনের নড়াচড়া ও স্থিরতা তার একত্বের সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। মুশরিকদের ধারণা ছিল মানুষ কখনো নবী হতে পারে না। নবীগণ উত্তর দিয়েছেন, সন্দেহ নেই আমরা মানুষ; কিন্তু মানুষের নবী হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। যার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়, তাকে নবী বলা হয়। আর আমাদের উপরও ওহী অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তায়ালার হেকমতের দাবি ছিল মানুষের নিকট কোনো মানুষকে নবী বানিয়ে পাঠানো হবে। পৃথিবীতে যদি ফেরেশতারা বসবাস করত তা হলে তিনি ফেরেশতাদেরই নবী হিসেবে প্রেরণ করতেন।

মুশরিকদের ঈমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, তাদের বাপ-দাদাদের অনুসরণ। তারা পিতৃপুরুষদের পথ ছাড়তে কখনো প্রস্তুত ছিল না। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের এই সংক্রান্ত দাবি খণ্ডন করা হয়েছে।

৪. আল্লাহ তায়ালার নীতি ও ওয়াদা হচ্ছে, তিনি শোকরগুজার বান্দাদের নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন। আর অকৃতজ্ঞদের জন্য তার শাস্তি কঠোর।

৫. ইবরাহিম আ. কাবাঘর নির্মাণের পর স্বীয় মক্কাবাসী সন্তান ও বংশধরদের জন্য যে দোয়া করেছিলেন, এ সুরায় তা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দোয়ায় তিনি তাদের জন্য নিরাপত্তা, উত্তম রিজিক, তাদের প্রতি অন্যদের মনের টান এবং নামাজ কায়েম ও মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন। (২৫-৪১)

৬. হক ও ঈমানকে উত্তম বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার গোড়া অত্যন্ত মজবুত, ফল সুমিষ্ট। পক্ষান্তরে বাতিলকে গোড়া উপড়ানো গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার কোনো স্থায়িত্ব নেই। তার কোনো ফলও হয় না। (২৪-২৭) ৭. সুরা ইবরাহিমের শেষরুকুতে কেয়ামতের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাহান্নামের আজাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

(৭) শোকরের অর্থ হচ্ছে, মানুষ নেয়ামত দানকারীর অনুগ্রহের কথা স্বীকার করবে। তার প্রশংসা করবে। তিনি যে উদ্দেশ্যে নেয়ামত দান করেছেন সেইজন্য তা ব্যবহার করা হবে। উদাহরণত ইলমের নেয়ামতের দাবি হচ্ছে সে-অনুযায়ী আমল করা, যারা জানে না তাদের জানানো। অন্যান্য নেয়ামতের বিষয়টি এরূপই।

৮ . যেভাবে কোরআন নাজিলের রহস্যের আলোচনার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছিল সেভাবে এর শেষআয়াতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, এ কোরআন মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক পয়গাম, যাতে তারা তাকে ভয় করে, তারা যেন জানতে পারে যে, তিনি একক উপাস্য আর জ্ঞানীরা যাতে উপদেশ গ্রহণ করে। (৫২)

চলবে ইনশাআল্লাহ...

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এসআইএস/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :