ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব: কিশোরগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ১৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন হাওরবাসী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২৪, ২১:৫৯

কিশোরগঞ্জে শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে হঠাৎ কালো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। বুঝে উঠার আগেই মুহূর্তে কালবৈশাখি ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। থেমে থেমে প্রায় ১ঘণ্টা ঝড়ের তাণ্ডব চলে।

কালবৈশাখীর ছোবলে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশত বসতবাড়ি, ভুট্টা ক্ষেত, পানের বরজ বোরো ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা পানের বরজ উঠতি ফসলের ক্ষেত। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, উপড়ে পড়েছে অনেক খুঁটি। হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা মিঠামইন উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৭৪ হাজার গ্রাহক এতে দুর্ভোগে পড়েছেন।

জানা গেছে ঝড়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় পোল্ট্রি খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের জহিরুল ইসলাম জানান, নিকলী রোডের পাশেই আমার প্রতিষ্ঠিত জহির পোল্ট্রি ফার্ম। শনিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। সময় ফার্মের টিনের চালা গাছের চাপায় মারা গেছে জহিরুলের তিন হাজার ডিম দেয়া সোনালি মুরগী, ভেঙ্গে পড়েছে ফার্মটিও। তিনি জানান তার ক্ষতি প্রায় পঞ্চাশ লাখের বেশি হতে পারে।

পল্লী চিকিৎসক হাফিজ উদ্দিন জানান, আমার ফার্ম মুরগী এবং আসবাবপত্রসহ প্রায় চল্লিশ লাখের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি ফার্ম ভেঙ্গে প্রায় লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। দানা পাটুলি ইউপির জিগাতলা আলোর বিতান দোকানের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমার দোকানের টিনের চালা উড়ে গেছে। এছাড়া এলাকায় বাজারের অনেক দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর বাজারের রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান বলেন, ঝড়ের সময় আমার দোকানে হঠাৎ শব্দ হয়। পরে দেখতে পাই অন্য দোকানের ছাল এসে আমার সাঁটারের উপরে পড়ে সাটার ভেঙ্গে গেছে।

পান চাষি নুরুল ইসলাম, কাঞ্চন মিয়া খোকন নুরুদ্দিনসহ অন্তত বিশজন পানচাষী জানান, পান খেতের বেড়া ভেঙ্গে পান গাছ এলোমেলো হয়ে গেছে। উপজেলার সাহেবেরচর এলাকার মাহফুজ হাসান জানান, চরাঞ্চলের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছপালা পড়ে অনেকের বাড়ি ঘরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।

জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় স্থাপিত কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক কলেজের সামনে কালবৈশাখি ঝড়ে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে ১৫ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন ছিল হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা মিঠামইন।

উপজেলাগুলোর ২৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৭৪ হাজার গ্রাহক এতে দুর্ভোগে পড়েছেন।

কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) সূত্র জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে রবিবার বেলা ১১টায় পর্যন্ত তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

এদিকে টানা প্রায় ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা হাসপাতালে। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন কাজ করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অটোরিকশাচালকেরা রাতে যানবাহনে চার্জ দিতে না পারায় কাজে বের হতে পারেনি।

তবে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন মিঠামইন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিস।

মিঠামইন পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, কিশোরগঞ্জ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের সরবরাহ লাইনে ঝড়ের আঘাতে গাছ-পালা পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক করতে পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা কর্মীরা কাজ করছেন। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হবে।

নিকলী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার আখতার ফারুক জানান, শনিবার রাতে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বছরের শুরুতেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে সামান্য শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আজও আকাশ মেঘলা রয়েছে। অস্থায়ী ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :