আশ্রয়ণের ২৪ ঘরের ১৬টি বিত্তবানদের দখলে, ঘরে না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ

ইমরান মাহমুদ, জামালপুর
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩৮ | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:২৯
ফাঁকা পড়ে আছে সরকারি অনুদানের ঘর, সম্প্রতি তোলা ছবি

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর নিজস্ব জমি, বাড়ি-ঘর থাকার পরেও অনেকের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ ভূমিহীনদের পরিবর্তে বৃত্তবানরা পেয়েছেন ঘর। এমনকি ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগ ঘরে থাকছেন না বরাদ্দ নেওয়া ঘর মালিকরা। এমন ১৬টি ঘরে ঝুলছে তালা। যারা ঘরগুলো পেয়েছেন, তাদের সবার জায়গাজমি রয়েছে।

ফসলের মাঠের পাশে ‘২নম্বর চর আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের অবস্থান। ২০২০-২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় প্রকল্পটিতে ২৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে দুই শতক জমিসহ ঘরগুলো বাসিন্দাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে আশ্রয় প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরেই তালা ঝুলছে। ঝোপঝাড়ে ঘিরে ধরেছে ফাঁকা ঘরগুলো। বারান্দা ও আশপাশে জমে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। কয়েকটি ঘরের বারান্দায় গবাদিপশু রাখা হয়েছে। কয়েকটি ঘরের মধ্যে পাটখড়ি রাখা রয়েছে। কোনো কোনো ঘরের উঠানে মাড়াই করা ভুট্টার গাছ শুকানো হচ্ছে। অধিকাংশ ঘর ফাঁকা থাকায় সেখানে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ভুতুড়ে পরিবেশের। এই পরিবেশ রাতের বেলায় ভয় ধরাচ্ছে অল্প যে কয়েকজন থাকেন তাদের মনে।

প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন গৃহবধূ শিউলি আক্তার। তিনি বলেন, ‘আসল গরিবরা তো জমি-ঘর পায়নাই। অনেকের জমি ও ঘরবাড়ি আছে। তারাও এখানে ঘর পাইছে। তারাই ঘরের মধ্যে থাকে না। ঘরগুলো খালি থাকায় রাতের বেলায় ভয় লাগে। সব ঘরে মানুষ থাকলে ভয় থাকত না।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘যাদের ঘরবাড়ি আছে, তারাও ঘর পেয়েছেন। তাই এখানে তারা থাকেন না। কখনো ঘরগুলো দেখতেও আসেন না তারা। কয়েকজন ঘরের মধ্যে ও বারান্দায় খড়কুটো ও লাকড়ি রেখেছেন।’

ঘরে অনেকে ছাগল-গরু রাখেনআশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৪টির মধ্যে ১৬ জন এসব ঘরে থাকেন না। কারণ, তাদের নিজের ঘরবাড়ি রয়েছে। তারা সেখানেই থাকেন। প্রকল্পের ঘরগুলো তালা লাগিয়ে রেখেছেন।

যারা ঘরে থাকেন না তারা হলেন রাজ্জাক মিয়া, শফিকুল ইসলাম, সবুজা বেগম, আয়নাল হক, নওশাদ আলী, সাবান আলী, ফাতেমা বেগম, জয়গুন বেগম, খলিল মিয়া, বিল্লাল হোসেন, আড়ং আলী, নওশাদ আলী, কামাল হোসেন, গেন্দা মিয়া, রাবিয়া বেগম ও আহাদ আলী।

খোঁজ নিতে আহাদ আলীর বাড়িতে গিয়ে জানা যায় তার ভিটে পাকা টিনশেড ঘর রয়েছে। বাড়ির জায়গাও অনেক বড়। বাড়িতে খোঁজ করলে থেকে তিনি ঘর থেকে বের হন। নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটি আমার ছেলের জন্য নেওয়া হয়েছে। এখন আমার ছেলে ঢাকায় থাকে। তাই ঘরটি তালা লাগানো।’ আপনার তো জমি-ঘরবাড়ি রয়েছে, এমন প্রশ্নে আহাদ আলী বলেন, ‘ছেলে তো ভূমিহীনই। কারণ, তার নামে তো কোনো জমি নাই।’

ওই প্রকল্পের আরেক ঘরের মালিক খলিল মিয়া। তারও বাড়ি ঘর বাড়ি রয়েছে। ঘরটি টিনশেডের। প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া সম্পর্কে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

প্রকল্পের বাসিন্দা নূরচান ও মোস্তফা শেখ বলেন, ‘২৪টির মধ্যে ১৬টি ঘরের কেউ থাকেন না। মাত্র আটটি ঘরে আমরা বসবাস করছি। এত বড় জায়গায় মাত্র আটটি পরিবার থাকায় কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাই রাতে আমরা ঠিকমতো বের হই না। যাদের জমিঘর আছে, তারাও এখানে ঘর বরাদ্দ পাওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যখন সরকারি কোনো লোকজন আসার খবর পান, তখন ওই সব লোক ঘর খোলেন। সরকারি লোকজন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তালা লাগিয়ে আবার চলে যান তারা।’

শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সায়েদুর রহমান জানান, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এসব ঘর ইউএনওদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ হয়েছে। যাদের জমিঘর আছে, এমন অনেকে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের থেকে ইউএনওরাই ভালো বলতে পারবেন।’

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা হক জানান, তিনি উপজেলায় একদমই নতুন। ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের বিষয়টি তার জানা নেই। ‘খোঁজখবর নিয়ে পরে মন্তব্য করতে পারবো’ বলেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :