শরীয়তপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৪, ২১:০৪

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে নড়িয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে বিকাল ৫টার দিকে ইউপি সদস্য লিটন লস্কর ও শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদারকে প্রধান আসামি করে বিদ্যালয়ের আরও চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা।

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, গত রবিবার বিদ্যালয় ছুটির পরে অষ্টম শ্রেণির ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লিটন লষ্কর এবং বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদার।

ঘটনার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ: গনি ও অন্যান্য শিক্ষকরা বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর গলায় ছুড়ি ধরে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। ফলে মেয়েটি ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সে তার মা ও খালার কাছে বিষয়টি জানায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওইদিনই তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, রাত থেকে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কারও সাথে কোন কথা বলছে না। তবে তার হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছে, যেটিতে মেয়েটি লিখেছে- ‘সবাই মিললা যিল্লা অনেক দিন হইছে অনেক দিন হতেছিল এইকারণে ডর হয় তাই আমি এরকম করি’। মেয়েটির সাথে কারা খারাপ আচরণ করেছে তা জানতে চাইলে সে আরেকটি চিরকুটের মধ্যে ইউপি সদস্য লিটন লস্কর ও শিক্ষক সঞ্জয় মজুমদারের নাম লিখে দেয়।

ভুক্তভোগীর মা জানান, ‘আমার মেয়েটি গত কিছুদিন যাবত কারও সাথেই ঠিকমতো কথা বলছিলোনা এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করছিলোনা। সবশেষে গতকাল আমার মেয়েকে বেশি চিন্তিত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে এক পর্যায়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে এবং সম্পূর্ণ বিষয়টি আমাকে খুলে বলে। তার সাথে দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের কাজ হচ্ছিলো বলে আমাকে জানায়। আমার মেয়ে আমার কাছে লিটন লস্কর ও সঞ্জয় স্যারের কথা বলেছে। তারা সহ অন্যান্য শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই আমার মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করে আসছিলো। প্রিন্সিপাল গণি স্যার আমার মেয়ের গলা টিপে ধরছে এবং গলায় ছুড়ি ধরে ভয় ভীতি দেখিয়েছে। এতদিন আমার মেয়ে ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। আমি আমার মেয়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ভুক্তভোগীর খালা বলেন, ‘আমার ভাগ্নি আমার কাছে সব খুলে বলেছে। মেম্বার লিটন লস্কর ও সঞ্জয় স্যার ওর সাথে খারাপ কাজ করছে। ও ভয়ে কিছু বলতে পারছে না।’

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ: গনির কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি গলায় ছুড়ি ধরার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ছুটিতে, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার দেওয়ান বলেন, ‘এই ধরনের অন্যায়ের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার কঠিন বিচার করা হোক এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন হোক এটাই আমি চাই।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিতু জানান, বৃহস্পতিবার একজন ভুক্তভোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত দেখা যাচ্ছে। আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছি, এগুলোর রিপোর্ট হাতে পেয়ে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বলেন, ‘শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে আমি রাতেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আজ বিকালে মেয়েটির মা থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর পরই প্রধান অভিযুক্ত লিটন লস্করকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :