রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নোয়াখালীর পৌরপার্ক এখন ময়লার ভাগাড়

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
  প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:১৫
অ- অ+

রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে অনেকটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে জেলা শহরের একমাত্র পার্ক ‘নোয়াখালী পৌর পার্ক’। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পার্কটি বর্তমানে ঘাস, গোচারণভূমি ও ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পার্কে বেশির ভাগ জিনিসপত্র। এতে বিনোদনের পাশাপাশি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার নাগরিকরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্কটি সংস্কার করে একটি আধুনিক পার্ক করার দাবি স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ২০১০ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের দিঘীকে ঘিরে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় নোয়াখালী পৌর পার্ক। উদ্বোধনের সময় পার্কটিতে দুটি দোলনা ও বাচ্চাদের জন্য কয়েকটি স্লিপার বসানো হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন এ পার্কটিতে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ একটু স্বস্তির আশায় ছুটে আসেন পার্কটিতে। ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে পার্কটির দুটি গেইট। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটির জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের বেশির ভাগ অংশই ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ভেতরে থাকা ক্যান্টিন, ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা যে যার মতো করে পার্কের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। পার্কের ভেতরের বেশির ভাগ অংশ ঘাস আর আগাছায় অনেকটা গোচারণ ভূমি হয়ে যাওয়ায় সবসময় পার্কের ভেতরে গরু-ছাগল দেখা যায়। যে দীঘিটি ঘিরে পার্ক তৈরি হয়েছে সেটির চারপাশও ময়লা আবর্জনার কারখানা হয়ে আছে।

অথচ, যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় জেলা শহরের বা তার আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে মানুষ একটু ভালো সময় কাটানোর জন্য এ পার্কে আসেন। পার্কটি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে হওয়ায় এবং পাশে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জজ কোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীরা কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাটাতে এ পার্কে আসেন। যা হতে পারতো সাধারণ মানুষের স্বস্তিতে সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু পার্কের জীর্ণদশার কারণে এবং শহরে আর কোনো সরকারি-বেসরকারি পার্ক না থাকায় সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন।

বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, মেয়ের পরীক্ষা থাকায় তিনি সকালে মাইজদী এসেছেন। তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে রাখার পর দীর্ঘসময় ধরে তাকে শহরে থাকতে হবে চিন্তা করে পার্কে এসে বসেছেন। তবে বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন না। কারণ পার্কের চার পাশে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ। বসার জায়গাগুলো ধুলা-বালি।

রিক্তার রানী নামের এক কলেজশিক্ষার্থী বলেন, কলেজ শেষ করার পর কয়েকজন বান্ধবীসহ পার্কে একটু বসে আড্ডা দেবেন বলে এসেছেন। কিন্তু একটি পরিষ্কার জায়গায় বসে সবাই যে আড্ডা দেবে তেমন জায়গা নেই। এছাড়াও কিছু বখাটে পোলাপাইন বিভিন্ন অংগভঙ্গির মাধ্যমে সবাইকে বিরক্ত করছে। নিরূপায় হয়ে আসার ৫/৭ মিনিট পর বের হয়ে যেতে হচ্ছে।

একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, শুধু অবকাঠামোগত সমস্যাই নয়, এ পার্কে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সের লোকজনে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে কিছু বখাটে কিশোর-যুবককের বিরুদ্ধে। প্রায়সময় পার্কের ভেতরে বাইরে ঘুরতে আসা লোকজনেক ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল-টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ১৮৭৬ সালে স্থাপিত নোয়াখালী পৌরসভায় বর্তমানে বসবাস করছেন প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। এটি দেশের প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে আধুনিক বা শিশু পার্ক’সহ ভালো কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তাই তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেনো পার্কটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এটিকে একটি আধুনিক পার্কে রূপান্তরিত করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চা্ রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে স্বীকার করে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্ল্যাহ খান সোহেল বলেন, জেলা প্রশাসন পার্কের জায়গাটি অনাপত্তি দিয়ে দিয়েছেন। পার্কটির উন্নয়নের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করে সেটিকে একটি নান্দনিক পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া আরও একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র।

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আখাউড়ায় কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
প্লোক্লেমেশন নয় গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ডিক্লারেশন চায় ১২ দলীয় জোট : জামাল হায়দার
বিদেশে পাচারের উদ্দেশে কিশোরীকে অপহরণ, গ্রেপ্তার ৩
শরীয়তপুরে পদ্মা নদী থেকে নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা