নির্দিষ্ট সময়ে উদীচীর অনুষ্ঠান শেষ না করা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অনভিপ্রেত: ডিএমপি
জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জারি করা নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান করা ও নেতিবাচক বিবৃতি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর বলে মনে করে ডিএমপি।
সোমবার রাতে ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে পাঠানো বার্তায় এ কথা বলা হয়।
উদীচীর এমন কর্মকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক উল্লেখ করে ডিএমপি বলেছে, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে নির্দেশনা জারি করেছে সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। সব ধর্মের মানুষের কাছে এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই উৎসব উদযাপনে থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক যেন এই দিনটি। বিশেষত দিনটি রঙিন হয়ে ওঠে বাঙালি পোশাকে-আশাকে, আয়োজনে এবং আপ্যায়নে। কিন্তু ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বাংলা সংস্কৃতির ধারক এই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ওপর উগ্রবাদী আঘাত এসেছে। বার বার চেষ্টা করা হয়েছে সংস্কৃতি যাত্রাকে ব্যাহত করার। উগ্রবাদের এই ভয়াল থাবা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করেছে, আঘাত করেছে সৃজনশীল ও সংস্কৃতমনা মানুষদের। উগ্রবাদীদের এই নৃশংসতায় প্রাণ দিয়েছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, ব্লগারসহ মুক্তমনা এবং রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। সর্বোপরি, জঙ্গি সংগঠনগুলোর টার্গেট হলো বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে দেশের মধ্যে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যা তাদের কার্যক্রমে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।
ডিএমপি বিবৃতিতে আরও বলেছে, এদেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পর দেশে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। এসব হামলায় অনেক মানুষের জীবনহানি হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। হামলা প্রতিরোধ করতে ও জনগণের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন বহুজন।
বিগত সময়ে ১৯৯৩ সালে (১৪০০ বঙ্গাব্দ) বাংলা শতবর্ষ উদযাপনে সরকার বাঙালির এই আয়োজনে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু উগ্রবাদ দমনে বর্তমান সরকারের গৃহীত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করায় সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে পুলিশ সবসময়ই তৎপর। প্রতিটি অনুষ্ঠানে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সদা সতর্ক থাকায় পরবর্তী সময়ে দেশে কোনো জঙ্গি হামলা বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারেনি। বর্তমান সরকার সবসময় অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতিকে তার নিজস্ব আমেজে উদযাপন করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। উদীচীর মতো বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনগুলো সারা বছর যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করে থাকে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তথা সরকার নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেগুলো বিবেচনা করে থাকে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য ‘বাংলা নববর্ষ ভাতার’ ব্যবস্থাও করা হয়েছে যাতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলিত হয়ে আনন্দের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারে।
ডিএমপি বলছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। পুলিশের এই নিরাপত্তা কার্যক্রমে সব জনগণ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন এটাই কাম্য, যেন আনন্দের এই অনুষ্ঠান বিষাদে পরিণত না হয়ে যায়। নিরাপত্তা বিধানে প্রদত্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না মেনে তার বিরোধীতা করে অনুষ্ঠান করা খুবই দুঃখজনক এবং উদীচীর মতো প্রগতিশীল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছ থেকে কখনো কাম্য নয়।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান আয়োজন ও সেখানে প্রদত্ত বক্তব্য খুবই হতাশাজনক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এহেন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অতীতেও উদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে উগ্রবাদী হামলার ইতিহাস রয়েছে বিধায় উদীচী তাদের নিজেদের ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবিষ্যতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রদত্ত বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা।
বর্ষবরণের জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় মানেনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে সংগঠনটি। পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় সংকোচনের প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। তবে দ্রুত শেষ করার তাগাদা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর অনুষ্ঠান করায় প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাদের।
এর আগে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অন্যদিকে, শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্ষবরণের সব আয়োজন বিকাল পাঁচটার মধ্যে শেষ করা হবে। সময় সংকোচনের নির্দেশনার মধ্যেই রবিবার ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল’ শিরোনামে সন্ধ্যায় শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/এসএস/এফএ)