দেশজুড়ে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট 

রাতে তীব্র ঝড়ের আশঙ্কা, হুঁশিয়ারি সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২৩| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৪০
অ- অ+

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপ প্রবাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ ছাড়া জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়সহ শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা করছে আবহওয়া অফিস। বিশেষ করে সিলেটের ওপর দিয়ে তীব্র ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় শুক্রবার বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছে চ্য়ুাডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

এদিকে এত গরম অনুভূত কেন হচ্ছে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এবং বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়ও জানিয়েছেন।

চলতি বছর গরম বেশি অনুভূত হবে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এবার গরম বেশি অনুভূত হবে। অতীতেও গরম বেশি অনুভূত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে আগেও। ১৯৭২ সালে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছিল। গত বছর ২০২৩ সালে অতি তাপপ্রবাহ বহমান ছিলো। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত গরমের তীব্রতা ছিলো। এবারও তাপমাত্রা বেশি থাকবে এবং গরমের অনুভূতির তীব্রতা থাকবে। এর পাশাপাশি অস্বস্তিবোধও থাকবে।’

গরম বেশি অনুভূত কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। দ্বিতীয়ত, এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এছাড়াও এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় থাকলে বৃষ্টিপাত কমে যায়। ফলে সূর্যের কিরণ বেশি থাকায় ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয়ে গরমের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। জলবায়ুগত এবং আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তনের ফলে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। একারণে বিশ্বের উত্তপ্ত পরিস্থিতি যেমন স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলে তেমনি স্থানীয় পর্যায়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিশ্ব প্রেক্ষাপটকেও আলোড়িত করে। প্রকৃতি উত্তপ্ত হয় প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট কারণে। ফলে তাপমাত্রাই শুধু পরিবর্তন হচ্ছে না। তাপমাত্রা পরিবর্তনের হারও পরিবর্তন হচ্ছে।

মানবসৃষ্ট কারণগুলো হলো এসি, ফ্যান, ফ্রিজ ব্যাবহার করি। ফলে ঘরের অভ্যন্তর ঠান্ডা রেখে পরিবেশে ছড়িয়ে উত্তপ্ত করে ফেলি। এছাড়াও বিভিন্ন কার্বন নির্গত করে বায়ুমন্ডল দূষিত করি। এসব দূষিতপণা তাপকে আটকে রাখে এবং পরিবেশকে ক্রমশ উত্তপ্ত করে তোলে। ঢাকায় রাতে ডিজেলচালিত ট্রাক চলাচল করে। ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসৃত করে। ক্রমাগত বৃক্ষ ও বন উজার করাও অন্যতম কারণ। কয়লাচালিত ইটভাটা চালু রাখাসহ বিভিন্ন কারণে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে।’

যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণেও তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর একস্থানে ধ্বংস চললে সেখানে তাপ উৎপন্ন হয়। সে তাপমাত্রা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে প্রকৃতিতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।’ এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে আগ্নেয়উৎপাত হলে সেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

সারাদেশে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এপ্রিল উষ্ণতম মাস। এসময় দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মাসজুড়েই বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের এলাকা বিস্তৃত কিংবা সংকুচিত হতে পারে। এছাড়াও তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে বা বাড়তে পারে তবে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে পুরো মাস।ফলে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।’

গরমে নাভিশ্বাস এবং অস্বস্তিবোধ থেকে মুক্তি লাভের উপায় জানিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘গরমে নাভিশ্বাস এবং অস্বস্তিবোধ থেকে মুক্তিলাভ পেতে তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে। আর তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো বজ্রঝড়। কারণ বজ্রঝড় যখন সংঘটিত হয় তখন তাপমাত্রা ৫ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়। বজ্রঝড়ের তান্ডব শুরু হলে তাপপ্রবাহ কমে প্রকৃতিতে ভারসাম্য নিয়ে আসে। ফলে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়।'

সারাদেশে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠানামা করে। ফলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে তাপপ্রবাহের যে পূর্বাভাস দেওয়া হয় তা মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘যেহেতু সারাদেশে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠানামা করে ফলে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমত সুতি বা হালকা কাপড় পরিধান করতে হবে।’

দ্বিতীয়ত প্রচুর পানি পান করতে হবে। তৃতীয়ত পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে এবং তুলনামূলক ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান করতে হবে। চতুর্থত, সূর্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল কিরণকাল হলো দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা। ফলে এই কয়েক ঘন্টা তাপের তীব্রতা বেশি থাকে। এই সময়টা বাইরে অবস্থান পরিহার করতে হবে। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে যারা রয়েছেন যেমন কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের যথাসম্ভব সূর্যের আলো এড়িয়ে চলাসহ নিয়মিত পানি পান করতে হবে। এছাড়াও বৃক্ষ রোপনকে উৎসাহিত করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/টিএ/কেএ/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০২০ সালে ক্ষমতা থাকলে যা করতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল
জাতীয় শ্রমশক্তি নিবন্ধন ব্যবস্থা ও তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলার সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ: আজহারের আপিল শুনানি ৬ মে পর্যন্ত মুলতবি
মানবতাবিরোধী অপরাধ: আজহারের আপিল শুনানি আজ, সুপ্রিম কোর্টে জামায়াত নেতারা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা