দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পদোন্নতি বন্ধের দাবি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৪, ১৯:১৪

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভায় প্রশাসনে নগ্ন দলীয়করণ বন্ধ করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।

সভায় অভিযোগ করা হয় যে, প্রশাসনে 'নিয়োগ', 'পদোন্নতি' সবই হচ্ছে দলীয় বিবেচনায়। ফলে মেধাবি ও যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না হয়ে দলদাসের মতো আচরণ করছেন। এর ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে।সুষম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত করছে। জাতিকে বিভাজিত করছে।সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়ছে। সরকার দলীয় লোকদের দ্বারা এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট সংঘটিত হচ্ছে বলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) এক সভায় এসব বলা হয়।

বিএসপিপির আহবায়ক প্রফেসর ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্ব ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমদ, প্রকৌশলী আবদুল হালিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, সাংবাদিক খুরশীদ আলম, একেএম মহসীন, বাছির জামাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলাম, নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর বেগম জাহানারা সিদ্দিকী,ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার এবিএম রুহুল আমিন আকন্দ, ডা. আবদুল কাদের,বিপ্লবুজ্জামান, কামরুজ্জামান কল্লোল, তানভীরুল আলম প্রমুখ।

সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, অনিয়ম দুর্নীতি চলছে ফ্রি স্টাইলে।কেউ যেন দেখার নেই। বিদুৎ, স্বাস্থ্য, পুলিশ, প্রশাসন ও শিক্ষা সেক্টরের দুর্নীতি এখন প্রকাশ্য।জবাবদিহির অভাবে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ঝেঁকে বসেছে।

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তিরস্কার ও বেতন হ্রাসের শাস্তি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগ নবীন হওয়ায় কম শাস্তির পাশাপাশি বড় দায় থেকেও অনেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন। কিন্তু অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনে বেড়েই চলেছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।আইনের ফাঁকফোকরে তিরস্কার কিংবা বেতন হ্রাস করে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি না দেওয়ায় প্রশাসনে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত আছে।

সভায় অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে। বিশেষ করে সরকারি ক্রয়, প্রকল্প চুক্তি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। অর্থ পাচারের বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ায় দুর্নীতিবাজদের লাগামটানা সম্ভব হচ্ছে না।ফলে ঘুষ লেনদেন ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বেড়েই চলেছে।ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে।রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতাকে নিজের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ লন্ডনে আড়াই শ বাড়ির মালিক বনে যাচ্ছেন।

সভায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অর্থের শেষ অবলম্বন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা আরোপের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। সভায় এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত জনগণের তথ্য জানার আইনসিদ্ধ অধিকার নিশ্চিতের পথে অনৈতিক ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ। খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানাবিধ সংকটে ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত, তখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিতে চায় বলে আমরা মনে করছি।

সভায় বলা হয়, গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির যেসব তথ্য জনস্বার্থে প্রকাশিত হয়েছে, তার বেশিরভাগই এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ প্রবেশাধিকারের সূত্র ধরে। সাংবাদিকদের ব্যাংকে প্রবেশে বাধা প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। সভায় দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

সভায় প্রয়াত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ উপলক্ষে ৩০ মে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ শেরে বাংলা নগরস্থ শহীদ জিয়ার মাজারে পুষ্পস্তব অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাত এবং ১ জুন সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা আয়োজন করবে।

ঢাকাটাইমস/২২মে/জেবি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :