কলকাতায় এমপি আনার খুনের ঘটনা রহস্যে ঘেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ১৯:২৯ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৪, ২১:২৪

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের খুনের ঘটনা ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। তার মরদেহের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। যেই ফ্ল্যাটে তিনি খুন হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে গিয়ে কোনো মরদেহ পায়নি কলকাতা পুলিশ। তবে ঘরে রক্তের দাগ দেখা গেছে। এসব এমপি আজীমের কি না তা নিশ্চিত হতে কাজ করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

ধারণা করা হচ্ছে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না কলকাতা পুলিশ। কে বা কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে তারও কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না।

এমপি আজীমের নিখোঁজ হওয়া ও খুনের বিষয়টির তদন্তভার নিয়েছে কলকাতার সিআইডি পুুুলিশ। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনসের অভিজাত আবাসনে যান সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।

সঞ্জীবনী গার্ডেনস থেকে বের হয়ে আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে হত্যা করা হয়েছে।

এমপি আজীমের শরীর টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই খবরের সত্যতা কতুটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে চতুর্বেদী বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। টিম ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফটোগ্রাফিসহ সবাইকে এই তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১১ মে তিনি দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কলকাতায় পৌঁছে তিনি ওঠেন তার বন্ধু, বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছিল না বলে জানান তার পরিবার।

কলকাতার পুলিশ সূত্র বলছে, গত ১২ মে ভারতে চিকিৎসা করাতে যান আনোয়ারুল আজীম। প্রথমে উঠেছিলেন বরাহনগরে তারই এক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। দিনদুয়েক সেখানে থাকার পর একদিন বাড়ি থেকে বের হন আজীম। তার পর থেকেই তার আর খোঁজ মিলছিল না। এমপি আনোয়ারুলের পরিবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গোপাল তাদের জানান, তিনিও আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

সিআইডির আইজি অখিলেশ জানিয়েছেন, খোঁজ না পেয়ে গোপাল থানায় একটি ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে একটি দল গঠন করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট।

কলকাতার এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কেসটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার একটি নির্দেশ আসে। তদন্ত চলছিল। তার মধ্যে ২২ মে আমরা জানতে পারি, তাকে খুন করা হয়েছে। শেষ বার যেখানে তাকে দেখা গিয়েছিল, সেই জায়গাটি খুঁজে বের করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এর পরে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

কলকাতার সিআইডি পুলিশ সূত্র বলছে, নিউটাউনের যে আবাসনে আজীম ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটটির মালিক সরকারি কর্মচারী জনৈক সন্দীপ। তিনি আবার আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। আখতারুজ্জামান আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু আখতারুজ্জামানের নামে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে কী করে এই সংসদ সদস্য থাকলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে অখিলেশকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি জবাব দেননি।

আনোয়ারুল আজীম যে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে উঠেছেন, তা জানা গেল কীভাবে- প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ বলেন, ‘১৮ তারিখে একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার পর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট একটি এসআইটি গঠন করে। সেই তদন্ত করতে গিয়েই আমরা খবর পাই।’

এমপি আজীমের খুনের ঘটনা চাউর হওয়ার পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে নিজ বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, আটককৃত তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আনোয়ারুল আজীম বাংলাদেশের কিছু অপরাধীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের কয়েকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা আটক ব্যক্তিদের নাম বলছি না। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে আনোয়ারুল আজীমকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

বুধবার বিকাল পাঁচটার পর তিনি থানায় প্রবেশ করেন এবং রাত ৮টার দিকে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় হওয়া এই মামলায় আসামি অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে।

এমপি আনার ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোড়স্থ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।

ঢাকা টাইমসের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, এমপি আজীম দীর্ঘ ১০ বছর যাবত এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। সাংসদ হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শুনতেন ও সমাধান করতেন। তিনি চলাচলের সময় কোনো পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন।

সব থেকে আলোচিত বিষয় হলো তার নির্বাচনি এলাকায় কোনো ব্যক্তি মারা গেলে ওই বাড়িতে আনোয়ারুল আজীম যেতেন এবং শোকার্ত পরিবারকে শান্ত্বনা দিতেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিরল।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/টিআই/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :