ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখিতে লন্ডভন্ড ২০টি গ্রাম, নিহত ৩

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভারী বৃষ্টি ও কালবৈশাখিতে অন্তত ২০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে দুই নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকালে উপজেলার পাড়িয়া, বড়বাড়ি ও ইউনিয়নের ওপর দিয়ে এই ঝড় বয়ে যায়, যার স্থায়িত্ব ছিল ১২ থেকে ১৫ মিনিট।
নিহতরা হলেন- পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) এবং একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে নাঈয়ুম।
নিহত ফরিদা বেগমের স্বামী পইনুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বাতাসে উড়ে এসে বারান্দায় পড়া টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে স্ত্রী। উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
পাড়িয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের দফাদার আজিজুর রহমান জানান, ঝড়ের সময় বারান্দা বসে ছিলেন দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা। মেঘের গর্জন আর ঝড়ে গাছপালা উড়তে দেখে বারান্দায়ই মারা যান তিনি।
দবিরুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঝড়ের সময় ভয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন তারা।
অন্যদিকে লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। খেলতে গিয়ে শিশুটি পড়ে গিয়েছিল। পরে পরিবারের লোকজনের নজরে এলে তাকে উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়াসহ ১২টি গ্রাম ও বড়বাড়ি ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ আটটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদীঘি বাজারে পাঁচটি দোকান ও দুটি হোটেলে গাছ ভেঙে পড়েছে, যাতে ঘরের টিন নষ্টসহ সার, কীটনাশক ও সিমেন্ট ব্যবসায়ীর পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আধাদীঘি বাজারের ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, বাজারে শতবর্ষী কিছু আমগাছ ছিল দীর্ঘদিনের। ১২ মিনিটের ঝড়ে সেই গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়েছে দোকানের ওপর। এতে দোকানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, ঝড়ে তাদের স্কুলের হলরুমের টিনের ছাউনি মাঠে এসে পড়েছে। বিদ্যালয়টির প্রবেশদ্বারে গাছ ভেঙে পড়েছে।
এদিকে বড়বাড়ি ইউনিয়নের আধারদীঘি থেকে হরিণমারী যাওয়ার রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে চলাচল বন্ধ আছে। কয়েকজনকে গাছ কেটে সরিয়ে রাস্তায় চলাচল স্বাভাবিক করতে দেখা গেছে ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ৪০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। বালিয়াডাঙ্গী বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ। আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন ঝড়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/০১জুন/ইএস)

মন্তব্য করুন