আটঘরিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ওসির অপসারণ দাবি

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রবিবার (৯ জুন) বেলা ১১টার দিকে আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। মিছিলটি আটঘরিয়া বাজার হয়ে থানার সামনে দিয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে পাবনা-চাটমোহর সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে আটঘরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাদিউল ইসলামকে অপসারণের দাবি জানান। একইসঙ্গে আগামী বুধবার (১২ জুন) আটঘরিয়ায় বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দেন।
সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবোত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাইমিন হোসেন চঞ্চল ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বক্তব্য দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম রতন বলেন, ‘আটঘরিয়ার থানার ওসি হাদিউল ইসলাম আটঘরিয়ার দাগি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। তার প্রত্যক্ষ মদদে কিছু সন্ত্রাসী আটঘরিয়ায় যা ইচ্ছে তাই করছেন। উনার পছন্দ না হলে উনি কোনো মামলা নিতে চান না। ওসির সঙ্গেই সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ঘোরে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না তিনি। এই ওসিকে আটঘরিয়ার মানুষ চায় না। এসময় ওসির অপসারণের দাবিতে বুধবার (১২ জুন) আটঘরিয়ায় বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টার হরতাল পালনের ঘোষণা দেন তিনি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবোত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাইমিন হোসেন চঞ্চল বলেন, ‘আটঘরিয়ায় হাদিউল ইসলাম ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আটঘরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, বরং সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে নিরীহ নেতাকর্মীদের হয়রানি করছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও ওসি হাদিউল ইসলামের অপসারণ দাবি করেন।’
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমি বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু আমাকে নির্বাচনের দিন প্রতিপক্ষের অফিস ভাঙচুরের আসামি করা হলো, তাও নির্বাচন পার হয়ে যাওয়ার ১০ দিন পর। আটঘরিয়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং নেতাকর্মীদের কুপিয়ে জখম করা হলো, তারা এখনো হাসপাতালে ভর্তি। সেই জুয়েলের নামে যখন মামলা দেওয়া হলো তাকে গ্রেপ্তার না করে সেই অভিযুক্ত আসামি জুয়েলের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো। আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার মামলাকে প্রভাবিত করতেই আমার নামে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, ওস একটি পক্ষের হয়ে কাজ করছেন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আটঘরিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার অপসারণের বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে। কেন তারা আমার অপসারণ চাচ্ছেন তার সুস্পষ্ট কারণ যদি উল্লেখ করতে পারেন তাহলে আমি আপনাদের সেই বিষয়ে বলতে পারবো। আমি চেইন অবি কমান্ডে কাজ করি। তাই আমি বিশ্বাস করি- আমি যে কাজগুলো করেছি তার যথাযথ আইনি দিকগুলো মেনেই করেছি। আমি কারো প্রভাবে প্রভাবিত নই। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং আইন যেভাবে বলে সেইভাবেই কাজ করি।’
উল্লেখ্য, গত ৩ জুন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় বিজয়ী চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের ৫ সমর্থক আহত হওয়ার অভিযোগ উঠে। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও ৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক জুয়েলসহ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়ের পর শনিবার (৮ জুন) প্রধান অভিযুক্ত জুয়েলের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামসহ কয়েকজনের নামে নির্বাচনের দিন জুয়েলের কার্যালয় ভাংচুরের মামলা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুন/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন