রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে ছয় রানে হারাল ভারত

ভারত-পাকিস্তান ম্যচ হবে আর সেখানে রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থাকবে না, সেটা যেনো কল্পনারও বাহিরে। চলতি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের আরও একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ উপভোগ করলো ক্রিকেটবিশ্ব। যেখানে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল ভারত।
পাকিস্তান কেন আনপ্রেডিক্টেবল, তা বোঝা গেল আরও একবার। ১২০ রানের ক্ষুদ্র টার্গেটে এসেও পাকিস্তানকে থামতে হয়েছে ১১৩ রানে এসে। ৬ রানের এই অবিশ্বাস্য হারে পাকিস্তানের বিদায়টাও প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়েছে এবারের বিশ্বকাপ থেকে। হার্দিক পান্ডিয়া-জাসপ্রিত বুমরাহরা ভারতকে এনে দিয়েছেন মনে রাখার মতো এক জয়। এটি ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করে জয়।
রবিবার (৯ জুন) ভারতের দেয়া ১২০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। তাতে ৬ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রোহিত শর্মার দল।
সহজ লক্ষ তাড়া করার ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দেখেশুনেই খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। প্রথম চার ওভারেই তারা তুলে নেন ২১ রান। তবে তার পরের ওভারের ঘটে ছন্দপতন। দলীয় ২৬ রানে ১০ বলে ১৩ রান করা বাবর আজম জাসপ্রিত বুমরাহ এর বলে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান।
বাবরের বিদায়ের পর উসমান খানকে নিয়ে জুটি গড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই জুটির কল্যাণে জয়ের কাছে চলে যেতে থাকে পাকিস্তান। তবে দলীয় ৫৭ রানে উসমান খানের বিদায়ে ৩১ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। অক্ষর প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান উসমান খান। তার বিদায়ে ৫৭ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
৫৭ রানে ২ উইকেট হারালেও হাতে ৮ উইকেট থাকায় সবাই ভেবেছিল ম্যাচটা সহজে জিতে যাবে পাকিস্তান। তবে নাটকের তখনও বাকি। উসমানের বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান ফখর জামান, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাদাব খান। এই তিন ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ে ৮৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান।
৮৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে পাকিস্তান। কেননা হাতে ৫ উইকেট থাকলেও ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটার ইমাদ ওয়াসিম ও ইফতিখার আহমেদ রান নিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। যার ফলে শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ৩০ রান।
১৮তম ওভারের প্রথম বলে এক রানেই নিতে পারে পাকিস্তান। প্রথম বলে এক রান নিলেও পরের বলে রান নিতেই পারেনি তারা। এর পরের বলটি নো বল হলে ফ্রি হিটে দুই রান সংগ্রহ করে বাবরের দল। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে এক রান করে নিতে সক্ষম হয় পাক বাহিনী। পরের বল ওয়াইড হলে পঞ্চম বলে ১ রান ও ষষ্ঠ বলে মাত্র ১ রান করেই নিতে পারে। অর্থাৎ ১৮তম ওভারে মাত্র ৮ রানই নিতে সক্ষম হয় তারা। যার ফলে জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১২ রান।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নেয় পাকিস্তান। তবে পরের দুই বলে আর রানই নিতে পারেনি পাকিস্তান। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আবারও এক করে সংগ্রহ করে পাক বাহিনী। আর পরের বলে তো উইকেটই হারিয়ে বসে পাকিস্তান। ১৯ তম ওভারের ষষ্ঠ বলে সাজঘরে ফিরে যান ইফতিখার আহমেদ। বড় শট খেলতে না পারা এবং উইকেট হারানোর ফলে শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৮ রান। ২০ তম ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান ইমাদ ওয়াসিম। যার ফলে পাকিস্তানের জয়ের আশা আরও কমে যায়। এরপর ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে এক রান করে নিতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। যার ফলে তিন বলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৬ রান। এরপর ওভারের চতুর্থ বলে চার মারেন নাসিম শাহ। ফলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল দুই বলে ১২ রান। দুই বলে দুইটি ছক্কাই পারতো পাকিস্তানকে জয় এনে দিতে।
তবে ওভারের পঞ্চম বলে আবারও চার মানের নাসিম শাহ, যার ফল জয়ের জন্য ১ বলে আট রানের দরকার হয় পাক বাহিনীর। ওভারের শেষ বলে রান নিলে ভারতে ম্যাচটি জিতে যায় ৬ রানে। এই জয়ে টানা দুই ম্যচে জয়ের স্বাদ পেল ভারত। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচ হেরে বিদায়ের শঙ্কায় পাকিস্তান।
এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমে আমির-নাসিমের বোলিং তোপে খেই হারিয়ে ফেলে ভারত। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে সুর্যকুমার যাদব কিংবা শিভাম দুবে, মোটাদাগে ব্যর্থ সবাই। খেললেন কেবল রিশভ পান্ত। তার ৪২ রানটাই ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝে বড় প্রাপ্তি। শেষদিকে আর্শদ্বীপ সিং রান করায় ভারতের রান গিয়েছে ১১৯ পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি তাদের চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। আর অলআউট হওয়া ইনিংসে এটি দ্বিতীয়।
(ঢাকাটাইমস/০৯ জুন/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন