রান খরার মাঠে রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এবার টাইগারদের সামনে লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো। এই ম্যাচ জিততে পারলেই সুপার এইটের পথ অনেকটাই সহজ হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের জন্য। সোমবার (১০ জুন) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় নিউইয়র্কের নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে দুই দল।
তবে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে বেশি চিন্তা বাংলাদেশের। কেননা এখানের উইকেট এখন পর্যন্ত আনপ্রেডিক্টেবল। উইকেটে একদমই রান নেই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভারতের বিপক্ষে এই মাঠে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র ১২২ রান তুললেও রোহিত শর্মারা তুলেছিলেন ১৮২ রান। কিন্তু বিশ্বকাপের মূল লড়াই শুরু হলে মাঠের চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। ইতিমধ্যে এই মাঠে ৫টি ম্যাচ গড়িয়েছে। যেখানে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটিং ধস দেখা গেছে। তাতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নামার আগে শান্তদেরও দুশ্চিন্তা ভর করেছে নিউইয়র্কের ড্রপ ইন উইকেট নিয়ে।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে জয় দিয়ে। আজকের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাও জয়ের ধারা ধরে রেখেছে। দুটি দলই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এবারের আসর শুরু করেছে। নিউইয়র্কের এই মাঠে লঙ্কানদের কুপোকাত করে প্রোটিয়ারা জয় তুলে নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। ডাচদের ম্যাচটিও নাসাউ কাউন্টিতে গড়িয়েছিল। তাতে তৃতীয় বারের মাঠটিতে নামবেন এইডেন মার্করামরা। তাদের কাছে মাঠটির অদ্ভুত আচরণ বেশ পরিচিত হয়েই উঠেছে। টাইগার বাহিনী প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠের যে আচরণ দেখেছিলেন তার সঙ্গে অনেকটাই অমিল দেখা গেছে বর্তমান অবস্থা। এই মাঠ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে চতুর্দিকে। আইসিসির পক্ষ থেকেও সে বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে।
লঙ্কানদের মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে দ. আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমেও ভুগেছে। এই রান তুলতে তাদের হারাতে হয়েছে ৪ উইকেট। ডাচরাও ১০৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি এই মাঠে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়াদের হারাতে হয়েছে ৬টি উইকেট। গতকাল হয়ে যাওয়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে উইকেট নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে। তাতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও বাকি ম্যাচের ভরাডুবি বাংলাদেশকেও শঙ্কার বাতাস দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছিল। সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে টাইগারদের টপ অর্ডার। এরপরে উইকেটের নাজুক অবস্থা থাকলেও ‘শাঁখের করাত’ এর দশা না হয়! কানাডা-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে কিছু রান দেখা গেলেও উইকেটের বিরূপ আচরণ সেখানেও স্পষ্ট ছিল। তাতে শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলে সেরা আটের লড়াইয়ে এক পা দিয়ে রাখবে দলটি। আবার হেরে গেলেও চিন্তার তেমন কিছুই নেই। নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে জিততে পারলে পরের পর্বে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। তাতে আজকের ম্যাচে ভয়-ডরহীন খেলার সুযোগ রয়েছে সাকিব আল হাসান-শান্তদের সামনে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় তুলে নিলে সেরা আটের দৌড়ে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাবে তারা। এমন সমীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে উইকেট। যেখানে টস জয়ী দল বেশ এগিয়ে থাকবে।
তবে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলেও এই ম্যাচ নিয়ে সিরিয়াস আফ্রিকান অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ম্যাচের আগের দিন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এখানে বাংলাদেশের অনেক সমর্থক থাকবে। আমরা এটা লম্বা সময় ধরেই করে আসছি। বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে কী হচ্ছে আমাদের মনোযোগ সেদিকেই। দর্শকরা যাদের বেশি সমর্থন দেয় তারা ম্যাচের মোমেন্টাম পেয়ে যায়। তারা যদি চুপ থাকে তার মানে আমরা ভালো করছি। আমরা ভালো খেলতে চাই এবং যতটা সম্ভব তাদের চুপ করিয়ে রাখতে চাই।'
নিজেদের সমর্থন নিয়েও অবশ্য আশাবাদী মার্করাম, ‘এখানে আমাদের এত সমর্থক আসবে, এটা সম্ভবত আমি আশা করিনি। দেখে খুব ভালো লেগেছে। আশপাশে অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান থাকে। তাদের খেলা দেখতে আসাটা ভিন্ন ধরনের বিনোদন। এখানে হয়তো অনেক চার বা ছক্কা হচ্ছে না, কিন্তু আমরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি। সমর্থকদের এখানে আসাটা দারুণ ব্যাপার।’
এদিকে প্রথম ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ দলের টপ অর্ডাররা। ব্যাট হাতে ফর্মে নেই টাইগার ব্যাটারদের অনেকেই। কথা হচ্ছে সৌম্য সরকারকে নিয়ে। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন, ‘শুধু সৌম্য না, আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলছি। আমরা তাদের খেলা, শক্তির জায়গাগুলো, প্রতিপক্ষ, তারা কী চায়; সবকিছু নিয়েই কথা হয়। কিন্তু এরপর মাঠে গেলে, ওখানে শুধু তারাই থাকে। তাদের নিজেদের খেলাটা বুঝতে হবে আর কী অনুভব করছে সেটাও। এখানে টেকনিক্যাল কোনো ব্যাপার নেই।’
‘আমার মনে হয় না তার সঙ্গে কিছু করার আছে আপনি যদি আউট হওয়ার ধরনগুলো দেখেন। কেবল তার ব্যাপার না, বাকিরাও যেভাবে আউট হযেছে, এখানে কিছু করার নেই। আমার মনে হয় তাদের শান্ত হয়ে নিজেদের শক্তির জায়গা নিয়ে ভাবতে হবে, কোনটা তারা ভালো করে এমনকি না ভেবেই বের করতে হবে। যখন আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকে, স্বাভাবিকভাবেই আপনি অটো মুডে চলে যাবেন। আপনাকে কেবল গিয়ে নিজের শক্তির জায়গা চিন্তা করে খেলতে হবে। যেকোনো ব্যাটারের জন্যই এটা বার্তা। ’-যোগ করেন হাথুরু।
বিশ্বকাপের এই ম্যাচে বাংলাদেশ অবশ্য নামবে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য নিয়ে। এখন পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে মুখোমুখি ৮ দেখায় কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো সবশেষ আসরে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। সেই অধরা জয়ের লক্ষ্যেই আজ খেলবে টিম টাইগাররা।
এই ম্যাচে অবশ্য মূল লড়াই হবে দুই দলের বোলারদের মধ্যে। এনরিখ নরকিয়া এরইমাঝে নিজের বিধ্বংসী রূপ দেখিয়েছে। ওটনিয়েল বার্টম্যানও আছেন দারুণ ছন্দে। অন্যদিকে মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদরাও মুখিয়ে আছেন নিজেদের সেরাটা দেখাতে। সব মিলিয়ে নাসাউ কাউন্টিতে জমাট এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
(ঢাকাটাইমস/০৯ জুন/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন