এলএনজি আমদানিতে ছয় বছরে ভর্তুকি ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস— এলএনজি আমদানিতে ছয় বছরে ভর্তুকি বাবদ ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারকে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে এসব জানান প্রতিমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
কোন অর্থবছর কত ভর্তুকি: ২০১৮-১৯: আড়াই হাজার কোটি টাকা; ২০১৯-২০: সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা; ২০২০-২১: দুই হাজার চারশ কোটি টাকা; ২০২১-২২: ছয় হাজার কোটি টাকা; ২০২২-২৩: ছয় হাজার ৩১৫ কোটি টাকা; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে: সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
সংসদে প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য রাখা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদে দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
এ অর্থবছরে গ্যাস খাতে সব মিলে ভর্তুকির জন্য প্রয়োজন ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফ জানতে চান, পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংযোগের হাল কী। জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি ক্রমাগত লোকসানের মুখে ছিল। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অংকের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি।
অবশ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে বিপিসি দুই হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ‘ডায়নামিক প্রাইসিং ফর্মুলায়’ জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
‘ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে’র অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কারিগরি ও অ-কারিগরি’ কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। এটি রোধ করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রি-পেইড, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হয়েছে এবং সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়।
সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২০জুন/কেএম)

মন্তব্য করুন