চাপ এসেছে, তবুও শেষ পর্যন্ত লড়ব: পরীমনি প্রসঙ্গে নাসির

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় গত মঙ্গলবার জামিন পেয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত-সমালোচিত নায়িকা পরীমনি। নায়িকার জামিন পাওয়ার পর অনেকে ভাবছে, নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সমাঝোতার মাধ্যমে এখানেই বুঝি সমাপ্তি হতে যাচ্ছে আলোচিত এই মামলার। কিন্তু বাদী বললেন, প্রশ্নই ওঠে না। জানালেন, সঠিক বিচারের আশায় তিনি শেষ পর্যন্ত লড়বেন।
পরীমনির জামিন ও মামলার তদন্তে গিয়ে পরীমনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সাকলায়েনের চাকরি থেকে অব্যহতির চিঠি সামনে আসার পর ফের আলোচনায় এসেছে পরীমনি ও বোর্ড ক্লাব ইস্যু। বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ।
পরীমনির সঙ্গে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসির বলেন, এরইমধ্যে সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে। বিভিন্নভাবে আমার ওপর কিছুটা চাপও এসেছে। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব এবং বিচার পাব বলে আশা করছি।
এ সময় সমঝোতা প্রসঙ্গে এ ব্যবসায়ী বলেন, আমার ওপর যতই চাপ আসুক আমি সমঝোতা করব না।
চাপ কারা দিচ্ছে, এমন প্রশ্নে উত্তরে এ ব্যবসায়ী বলেন, তার (পরীমনি) সঙ্গে সমাজের অনেক বিশেষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বা ছিল। এরইমধ্যে আপনারা অনেক কিছু জেনেছেন। সেসব মহল থেকে চাপ আসতেই পারে।
পরীমনির সঙ্গে এডিসি গোলাম সাকলায়েনের সম্পর্ক নিয়ে নাসির বলেন, পরীমনির সঙ্গে গোলাম সাকলায়েনের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই ছিল। অর্থাৎ পরীমনি ও তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পূর্ব থেকেই।
নাসির বলেন, যেদিন তাকে গ্রেপ্তারর করা হয় ডিবি থেকে সেদিন গোলাম সাকলায়েনের আসার অনুমতি ছিল না (কোনো বিশেষ কারণে তার অপারেশনে যাওয়ার অনুমতি ছিল না)। তারপরও তাকে স্পটে দেখা গেছে। খুব উৎফুল্ল ছিলেন সাকলায়েন। ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর পরীমণিও সেখানে আসেন। সাকলায়েন তাকে সেখানে নিয়ে গেছেন।
এ ব্যবসায়ী বলেন, আমার ধারণা, সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই তাকে দিয়েই এমন কিছু ঘটিয়েছে বা এমন আরও সাকলায়েন থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনি ও তাঁর সহযোগীরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। দিবাগত রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে ক্লাব ত্যাগ করার সময় পরীমনি তাঁকে (নাসির) ডাক দেন। পরে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাঁকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি হত্যাচেষ্টার জন্য একটি গ্লাস ছুড়ে মারেন, যা তাঁর মাথায় ও বুকে লাগে।
মামলাটি তদন্ত করে গত এপ্রিলে ঢাকার সিজেএম আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জুনায়েদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরকে মারধর করার অভিযোগের সত্যতা তদন্তে পেয়েছে পিবিআই। অপর দিকে পরীমনির ছোড়া মদের গ্লাসে নাসিরের গায়ে আঘাত লাগার ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে পিবিআই।
বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী নাসিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ জুন সাভার থানায় মামলা করেন পরীমনি। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাসির, তুহিন সিদ্দিকী ও শাহ শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। ২০২২ সালের ১৮ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯। পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুন/এলএম/কেএম)

মন্তব্য করুন