মা-বাবার বিয়ের বয়স ১৪, মেয়ের ১৮ বছর দেখিয়ে কাবিন বানালেন কাজি

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজির বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে নিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে। মা-বাবার বিয়ে ১৪ বছর হলেও মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ১৩ বছরের কিশোরীর বয়স ১৮ দেখিয়ে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি বদিউল আলমের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে ওই কাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ৮ জুলাই কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মাদরাসা শিক্ষার্থীর মা পান্না আক্তার।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়ন সাতবাড়ীয়া গ্রামের দিনাত জাহান নুপুর (ছদ্দ নাম) ও একই এলাকার আবদুল হালিমের ছেলে রাজমিস্ত্রি সরোয়ার হোসেন শাখাওয়াতের (২১) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩ জুলাই প্রেমিক সাখাওয়াতসহ কয়েকজন যুবক প্রেমিকার বাড়ি থেকে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়।
মেয়ের পরিবার ঘটনার একদিন পরে জানতে পারেন, ওই ইউনিয়নের কাজি বদিউল আলম জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২৪ এপ্রিল মেয়েটির ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে তিন লাখ টাকা দেনমোহরে লাকসাম পৌরসভার রাজঘাট এলাকায় তার নিজস্ব কার্যালয়ে প্রেমিক শাখাওয়াতের সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন করেন।
কিশোরীর মা বলেন, ‘কয়েকজনের কথায় আমি বাধ্য হয়েই কাজি অফিসে যাই। সেখান থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেখতে পাই, জাল-জালিয়াতি করে কাজি বদিউল আলম আমার নাবালিকা মেয়েকে শাখাওয়াতের সঙ্গে বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ে হয় ২০১০ সালের ২৫ জুন। ১৪ বছর হলো। কিন্তু কাজী ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে আমার মেয়ের জন্ম তারিখ দিয়েছে ২০০৬ সালের ৫ মার্চ। অথচ আমার মেয়ের প্রকৃত জন্ম নিবন্ধন ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর। ভুয়া সনদ তৈরি করে তার বয়স ১৮ বছর দেখানো হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কান্দিরপাড় এলাকার এক বাসিন্দা জানান, কাজি বদিউল আলম বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নকল রেজিস্ট্রার বই ব্যবহার করে বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। পরে কেউ কাবিননামা চাইলে কাবিননামা দিতে অস্বীকার করেন।
এছাড়া রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন জায়গায় বর ও কনের জন্মের তারিখ লিপিবদ্ধ করা হয় না। এমনকি বিবাহ পড়ানো ব্যক্তি, সাক্ষী, কনে ও কাজির সইও থাকে না। বেআইনি প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের জন্য এসব অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়।
বাল্যবিয়ের বিষয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বদিউল আলমকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে ওই কাজির সঙ্গে কথা বললে বিভিন্ন কথা বলে নিজের দোষ এড়িয়ে যাওয়ার পায়তারা খোঁজেন তিনি।
এ ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই সিদ্দিকী জানান, ‘কোনোমতেই বাল্যবিয়ের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। কাজি এমনটা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এজে)

মন্তব্য করুন