এমপি আনার খুন: লাশ শনাক্তে নেই গতি, নজরদারিতে অনেকে, অজানা হত্যার রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০২৪, ১৫:৪৭| আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ১৬:১৪
অ- অ+

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মরদেহ শনাক্তে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনের সুয়ারেজ লাইন থেকে মাংসের টুকরো এবং বাগজোলা খাল থেকে হাড় উদ্ধার হলেও সেগুলা আনারের শরীরের অংশ কি না তা যাচাইয়ে দেশটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে এমপি কন্যার। তবে ভারতে থেকে ডাক পাওয়ার খবর এলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। তাই ডিএনএ নমুনা দিতে সেখানে যেতে পারছেন না আনার কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। চলতি সপ্তাহে চিঠি আসলে ডিবির একটি দলের সঙ্গে ডরিন ভারত যেতে পারেন বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ।

আবদুর রউফ বলেন, ‘মাংস ও হাঁড়ের ফরেনসিক পরীক্ষা হয়েছে কি না জানি না। তবে দেশটি থেকে চিঠি আসলে ডরিন (আনার কন্যা) সেখানে ডিএন নমুনা দিতে যাবেন। তার সঙ্গে ডিবির একটি দলও যাবে। আশা করছি এই সপ্তাহে তারা ভারতে যাবেন।’

রউফ আরও বলেন, ‘হত্যার রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। পাশাপাশি এমপির মরদেহও শনাক্ত হয়নি। ধীরে ধীরে অনেক কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে, ফলে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মরদেহ শনাক্ত নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।’

বাবা হত্যার পর সংবাদ সম্মেলনে আনারকন্যা ডরিন

একই কথা বলছেন আনার হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘এমপি আনারকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো ‘অস্পষ্ট’ ঠেকছে পুলিশের কাছে। এখনো পুরোপুরি ‘স্পষ্ট’ নয় হত্যার কারণ।

গুরুত্বপূর্ণ একজন নজরদারিতে:

সূত্র বলছে, আনার হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর পিন্টুকে নজরদারি রেখেছে ভারতীয় পুলিশ। শাহীন দেশটিতে গেলে ভারতীয় নাগরিক পিন্টু তাকে দেখভাল করতেন। এমনকি আনার হত্যায় জড়িত ছিল এই পিন্টু। সেই মূলত খুনিদের সঙ্গে সমন্বয় করে আনার হত্যায় ব্যবহৃত ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি সরবরাহ করে। দুর্ধর্ষ এই খুনের পর থেকে আত্মগোপন পিন্টু। তার বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছে দেশটির পুলিশ। জানা গেছে, পিন্টুর নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। সেই গাড়ি ব্যবহার করতেন শাহীন। পিন্টু কলকাতাতেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

আনার হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন— শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ফয়সাল আলী সাজি ও মোস্তাফিজুর রহমান। এর বাইরে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং নেপালে ধরা পড়েন সিয়াম। সিয়ামকে পরে ভারতের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শাহীনকে ফেরাতে চায় ভারত:

এমপি আনার হত্যার পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে তারই দীর্ঘদিনের বন্ধু মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা আক্তারুজ্জামান শাহীনকে। এই শাহীনকে ফেরানো গেলে মামলার অনেক রহস্য উদঘাটন হবে। আনার হত্যার পর দেশ থেকে পালিয়ে যান শাহীন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, কিন্তু ভারতের আছে। শাহীনকে ভারতে প্রত্যর্পণের পরিকল্পনা করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ অপরাধটি ভারতের মাটিতে ঘটেছে। যদিও হত্যার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে গণমাধ্যমে দাবি করেন শাহীন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহীনের বড় ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিম।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। এর নয়দিন পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে খবর আসে, আনারকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি। গ্রেপ্তারের পর ঘাতকরা জানিয়েছে, আনারকে কৌশলে সঞ্জিবা গার্ডেনে নিয়ে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর তাকে হত্যা করে চাপাতি দিয়ে হাঁড় থেকে মাংস আলাদা করে তা গুম করা হয়।

উদ্ধার হয়নি তিন মোবাইল:

এমপি আনার হত্যার পর তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সীমান্ত চোরাচালানি ও স্বর্ণকারবারিদের সঙ্গে বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, আনারের উত্থান চোরাকারবারির মাধ্যমে। পরে ৬ জুন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১জুন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করা হয়। পরে এই হত্যা মামলায় মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিন্টু এবং বাবুর সঙ্গে খুনিদের যোগসূত্রতা পাওয়া যায়। বাবু নিজে ফেঁসে যেতে পারেন দেখে তার ব্যবহৃত তিনটি ফোন একটি খালে ফেলে দেন। তবে অনেক চেষ্টা করেও সেই ফোনগুলো উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর মোবাইল ফোনে এমপি আনারের অচেতন ও চেয়ারে বেঁধে রাখা ছবি পাওয়া যায়। খুনিরা যা তাকে সরবরাহ করেছিলো।

অনেকে নজরদারিতে:

আনার হত্যার ঘটনায় নতুন করে আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ড শেষে যখন সবাই চলে যায় তখন সর্বশেষ মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সঞ্জিবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সেখানেও শাহীনের সঙ্গে তাদের কথা হয়। শাহীন তাদের নির্দেশ দেয়, ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনো চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে; সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলা হয়। এরপর ১৯ মে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে আসার টিকিটও শাহীন কেটে দেন।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে এসেও শাহীনের ঢাকার বাসার তিনতলায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। আসামিদের কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য মিলেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এসএস/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দোহার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক গ্রেপ্তার
‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন
সুবর্ণচর এক্সপ্রেস দ্রুত চালুর দাবিতে নোয়াখালীতে দেড়ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ 
জেফারের তীরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দর্শক-শ্রোতার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা