কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে কলকাতার একঝাঁক তারকা
বাংলাদেশি তারকাদের পর এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিলেন ওপার বাংলার একঝাঁক তারকা। আন্দোলনের জেরে নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই রক্তের খেলা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। চলুন দেখে নিই কে কী লিখেছেন-
কবীর সুমন
জনপ্রিয় এই গীতিকার, সুরকার, লেখক ও গায়ক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন, আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে এমন হলো এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত, তা–ও তো ঠিকমতো জানি না। তা–ও করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি। অনুগ্রহ করে হিংসা, হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকার সরকারকে অনুরোধ করছি, বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেয়।’
‘আর কী বলি, আমি তো সশরীর যেতে পারছি না ঢাকায়, পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সবাইকে শান্তিরক্ষার জন্য আহ্বান করতাম। আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয়–আসয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই–বা কেন। ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট/ ভেঙে ফেল্ কর্রে লোপাট’। মনে হচ্ছে, গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে। কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই, মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।’
‘আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গেছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা ভালোবাসার বন্ধনে।’
‘হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ। বাঁচুন বাংলাদেশের সবাই। জয় বাংলাদেশ, জয় মুক্তিযুদ্ধ, জয় অসংখ্য বাংলাদেশির শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতি স্বীকার। জয় বীরাঙ্গনার। জয় বাংলা ভাষার।’
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
এই নায়িকা লিখেছেন, ‘এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলে না। আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো।’
‘তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয়না, মা'ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি, কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীরনগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছ গুলোও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘগুলোও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ।’
‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়
দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ
তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া ?
নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই
তোমার ছিন্ন শির, তিমির।’
এমন এক আপ্যায়নপ্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, অমন সুন্দর করে সারা রাস্তা জুড়ে ভাষার আল্পনা আর কোথায় দেখব? নয়নজুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব।’
‘আজ, অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো-সেই আমাদের আলো…আলো হোক...ভালো হোক সকলের।’
সাহানা বাজপেয়ী
এই সংগীতশিল্পী লিখেছেন, ‘মৃত্যুর ঠিক আগে সোস্যাল মিডিয়ায় '৬৯ সালের শহীদ শিক্ষক শামসুজ্জোহার কথা লিখেছিলেন আবু সাঈদ। ডক্টর শামসুজ্জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানি সেনার বন্দুকের গুলি থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি।’
আবু সাঈদ লিখেছিলেন, ‘স্যার, এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার। আপনার সময়সাময়িক যারা ছিল, সকলেই মরে গেছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা৷ আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।’
‘আবু সাঈদ শুধু নন, গোটা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে আজ বলছে, ‘যদি আজ শহিদ হই তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্র সমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে রুমে ফিরবে তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন।’
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত
এই সংগীত পরিচালক লিখেছেন, ‘জীবন আপনাকে মনে রাখবে, ভাই। ক্ষমতার সাথে সাথে দায়িত্ব আসে, সত্য প্রায়শই ভুলে যায় এবং অগ্রাহ্য হয়ে যায়। এমন সরকারের জন্য তীব্র লজ্জ্জা। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সাথে নিরঙ্কুশ সংহতি।’
অনিন্দ্য চ্যাটার্জি
ক্ষুদিরাম বসুর কবিতা ক্যাপশন দিয়ে এই চলচ্চিত্র পরিচালক লিখেছেন,
‘লড় - না লড়তে পারলে বলো।
না বলতে পারলে লেখো।
না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও।
না সঙ্গ দিতে পারলে যারা এগুলো করছে তাদের মনোবল বাড়াও।
যদি তাও না পারো, যে পারছে,
তার মনোবল কমিও না ।
কারণ, সে তোমার ভাগের লড়াই লড়ছে।
- ক্ষুদিরাম বসু’ ।
কৌশিক সরকার
নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ছবি পেন্সিলে এঁকে সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করেছেন এই গুণী শিল্পী। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে…।’
(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এজে)