সাংবাদিকতা কি অপরাধ, প্রশ্ন হাসান মেহেদীর মায়ের
‘আমার খোকার বুকটা পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেলো। কী অপরাধ ছিল ওর। কেন ওকে হত্যা করা হলো। সাংবাদিকতাই কি ওর অপরাধ ছিল। তার অবুজ দুটি শিশু সন্তান। কী হবে ওদের ভবিষ্যৎ। ওরা যে বাবাহারা হলো সে বুঝই ওদের হয়নি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’
কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদীর মমতাময়ী মা মাহমুদা বেগম।
পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান হাসান মেহেদী (৩১)। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউয়িনের এক নম্বর ওয়ার্ডের হোসনাবাদ গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মোশাররফ হোসেন (৭০) ও মা মাহমুদা বেগম ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েন। মাহমুদা বেগম (৫৫) বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন সন্তান হারানোর খবর পেয়ে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনে হাসান মেহেদীর কর্মস্থল ঢাকা টাইমস কার্যালয় চত্বরে জানাজা শেষে গভীর রাতে নিজ বাড়িতে তার মরদেহ পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে আসে।
স্বামীর মৃত্যুতে নির্বাক ফারহানা ইসলাম পপি (২৫)। থেমে থেমে বিলাপ করছিলেন। নিষ্পাপ দুই কন্যাকে বুকে নিয়ে তার আহাজারি যেন নিস্তব্ধ করে দেয় চারপাশ।
স্বামীর সঙ্গে সবশেষ যে কথা হয় তা তুলে ধরেন ধরা গলায়। পপি বলেন, ‘ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তিনি শুধু বলছিলেন, পরিস্থিতি ভালো না। আমার জন্য দোয়া কইরো।’
‘আমার জীবনের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। কী হবে আমার অবুজ শিশু দুটির’— প্রশ্ন স্বামীহারা পপির।
মেহেদীর বাবার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যময়। আমার ছেলে খুন হয়েছে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমার ছেলে হত্যাকারীর বিচার চাই।’
গত শনিবার সকাল ৮টায় জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে হাসান মেহেদীর মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বাউফল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কর্মকার, এবিএম জিমানুর রহমান ও অহিদুজ্জামান ডিউকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত বাউফল উপজেলা ও পটুয়াখালী জেলার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এসআইএস)