ক্যানসারের কাছে হার মানলেন গায়কোয়াড়

ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও দলটির কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় অনেকদিন ধরেই লড়ছিলেন ক্যানসারের সঙ্গে। তার চিকিৎসার জন্য দেশটির ক্রিকেট বোর্ড বরাদ্দ দিয়েছিল ১ কোটি রুপি। সাবেক সতীর্থের জন্য নিজের পেনশনের টাকাও ছাড় দিতে চেয়েছিলেন কপিল দেব। অন্য সাবেক সতীর্থরাও এগিয়ে এসেছিল সাহায্যের জন্য। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে নিজ শহরে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অংশুমান। বুধবার (৩১ জুলাই) রাতে মারা যান তিনি।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। মাসখানেক আগে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। নিজের শহর বরোদাতেই তার পর থেকে চিকিৎসা চলছিল তার। বুধবার রাতে চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রয়াত হন অংশুমান গায়কোয়াড়।
৭১ বছর বয়সে দীর্ঘদিনের সঙ্গী ক্যানসারের কাছে হেরে গেলেন ভারতের ক্রিকেটের বড় এই নাম। প্রথমে খেলোয়াড়, এরপর নির্বাচক আর পরে কোচের ভূমিকায় ছিলেন এই ব্যাটার। ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট যেদিন খেলতে নেমেছিল, সেদিনও ভারতের কোচ ছিলেন এই অংশুমান গায়কোয়াড়। তার অধীনেই ভারত গিয়েছিল ২০০০ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফির ফাইনালে।
২২ বছরের ক্রিকেটজীবনে দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলেছেন গায়কোয়াড়। ১৯৭৪ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তার। ৪০টি টেস্টে ৩০.০৭ গড়ে ১ হাজার ৯৮৫ রান করেছেন। শতরান করেছেন দুটি, অর্ধশতরান ১০টি। সর্বোচ্চ রান ২০১।
মোট ১৫টি এক দিনের ম্যাচও খেলেছেন তিনি। ২০.৬৯ গড়ে ২৬৯ রান করেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০৬টি ম্যাচে ১২ হাজার ১৩৬ রান করেছেন। শতরান রয়েছে ৩৪টি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ২০১ রানের ইনিংসটিকে এখনো টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম ধৈর্যশীল এক ইনিংস ধরে নেওয়া হয়। ডাবলের পথে খেলেছিলেন ৬৭১ মিনিট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এর চেয়ে ধীরগতির ইনিংস আর নেই। জ্যামাইকাতে মাইকেল হোল্ডিংদের বিপক্ষে হেলমেট ছাড়া দাঁড়িয়ে তার করা ৮১ রানের ইনিংসটাও ভারতের ক্রিকেটে স্মরণীয় এক ইনিংস।
১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুই দফায় ছিলেন ভারতের কোচ। শচীন টেন্ডুলকার অধিনায়ক ছিলেন তারই অধীনে। আবার ভারতীয় ক্রিকেট যখন ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে অভিযুক্ত, তখনও দলের প্রয়োজনে খণ্ডকালীন কোচের পদে তিনিই এসেছিলেন।
মাসখানেক আগে যখন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে, তখন প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না তার কাছে। ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার সন্দীপ পাতিল তখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলেন গায়কোয়াড়কে সাহায্য করার জন্য। পরে ’৮৩-র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কপিল দেবও বোর্ডের কাছে একই অনুরোধ জানান। বিসিসিআই সচিব জয় শাহ তারপর ফোনে কথা বলেছিলেন গায়কোয়াড়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। কঠিন সময় তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন বোর্ড সচিব। গায়কোয়াড়ের চিকিৎসার জন্য ১ কোটি রুপি দেয় বোর্ড।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি এবং বিসিসিআই সচিব জয় শাহ।
(ঢাকাটাইমস/০১ আগস্ট/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন