মাঠ ছাড়ছেন না সমন্বয়কেরা: জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রধান সংবাদ
দেশে চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩৩তম দিন আজ শুক্রবার। গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন শুরু করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুক্রবারের জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রধান সংবাদে প্রাধান্য পেয়েছে আন্দোলনের পরিস্থিতি, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং দেশের অর্থনীতিসহ চলমান ঘটনাবলী।
ঢাকা টাইমসের প্রধান শিরোনাম ‘জামায়াত-শিবির ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ রাজনীতিসহ সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে ধর্মভিত্তিক দলটিকে নিষিদ্ধ করল সরকার।
আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম, ‘মাঠ ছাড়ছেন না সমন্বয়কেরা’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে ডিবি তাদের সপ্তাহখানেক আটকে রাখলেও তারা বলছেন, তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটাকে নিরাপত্তা দেওয়া বলা চলে না। মুক্তির আগে তারা ৩২ ঘণ্টা অনশনে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে কথা না বলার শর্তে ডিবি পুলিশের গাড়িতে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। অবশ্য বাসায় পৌঁছানোর পরই মুখ খুলতে শুরু করেন সমন্বয়কেরা। মুক্তি পেয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি লেখেন, ‘যত দিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; তত দিন এ লড়াই চলবে।’
বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম, ‘জুলাইয়ে রিজার্ভ কমল ১৩০ কোটি ডলার’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেশে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে জুলাইয়ে। জুনের তুলনায় গত মাসে ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ২৫ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসী আয়ে বড় পতনের এ ধাক্কা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পড়েছে। জুলাইয়ে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সের এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম, ‘নিহত ৭৮ শতাংশের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষত’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সংঘাতে নিহত প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। বেশির ভাগের গুলি লেগেছে মাথা, বুক, পিঠ ও পেটে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২১২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ১৭৫ জনের মৃত্যুর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী গুলি ও ২২ জনের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন ছিল। অন্যদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে ছিল মারধর ও আঘাতের চিহ্ন। চারজনের মৃত্যু হয়েছে গাড়ি ও স্থাপনায় দেওয়া আগুনে পুড়ে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দুজনের।
মানবজমিনের প্রথম পাতার খবর, ‘আন্তর্জাতিক তদন্তে জোর কূটনীতিকদের’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুই শতাধিক মৃত্যু, হাজার হাজার আহত এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত। বৃহস্পতিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত জরুরি কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতিনিধিরা প্রায় অভিন্ন সুরে কোটা আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি ও সহিংসতার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।
সমকালের প্রথম পাতার খবর, ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’: বিক্ষোভে পুলিশের বাধা, ধস্তাধস্তি’ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতেও গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গাইবান্ধা ও কুমিল্লায় পুলিশ-বিজিবির বাধায় কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেসব স্থানে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম, ‘ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল সমাবেশ’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নিহতদের হত্যার বিচার, গণগ্রেফতার বন্ধ, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার প্রতিবাদসহ নয় দফা দাবিতে সারা দেশে শুক্রবার প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম, ‘সন্ত্রাসের দায়ে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তাদের সব অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-২ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জানানো হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরসহ তাদের সব অঙ্গসংগঠনের বিবৃতিও এখন নিষিদ্ধ।
যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘এজাহারে কোথাও পুলিশের গুলির কথা নেই’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে পুলিশের গুলির কথা কোথাও উল্লেখ নেই। বেশিরভাগ এজাহারে হত্যাকারী হিসাবে অজ্ঞাতনামা তৃতীয় পক্ষের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। পুলিশের ভাষায় তারা দুষ্কৃতকারী। হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ হত্যা মামলার বাদী পুলিশ।
সংবাদের প্রথম পাতার খবর, ‘গুলির পারমিশন ছিল না, বিচার হবে : আরাফাত’। প্রতিবেদনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলি করার অনুমতি ছিল না। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য যারা ছিলেন তাদের সংবিধান ও আইনের অধীনে কাজ করতে হয়েছে। তবে, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য) কেউ কেউ যে আইন ভাঙেননি, এমনটিও অস্বীকার করেননি তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/কেএম)