হত্যা-নিপীড়ন চালিয়ে গণঅভ্যুত্থানের যাত্রা ব্যর্থ করা যাবে না: মির্জা ফখরুল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের লোকজনের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি এই নির্মম হামলা, দমন নিপীড়নের তীব্র ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দেশব্যাপী গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের পথে যে যাত্রা শুরু করেছেন, হত্যা, দমন, নিপীড়ন চালিয়ে তা আর ব্যর্থ করা যাবে না।
তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত, সংঘর্ষ উস্কিয়ে দিয়ে আন্দোলনের বিজয় নস্যাত করতে চায়। অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে আন্দোলনরত জনগণ সরকারের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ব্যর্থ করে বিজয় ছিনিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতা জবরদখল করে রাখা আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক মানুষ। গতকাল আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে আজ সমগ্র দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মী জমায়েত করে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দেয়। ঢাকার ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর, উত্তরা, তোপখানা রোডসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করে। সমগ্র দেশকেই আজ রণক্ষেত্রে পরিণত করে হত্য, নির্যাতন ও বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। আলোচনার কথা বলে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র জনতাকে হত্যা করছে স্বৈরাচারী সরকার।
আজ দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সামাজিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়। আন্দোলন দমন ও ভায়ভীতি প্রদর্শন করতে আজ সন্ধ্যা থেকে আবারও সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বরাবরের মতো আজও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। গতকালকের মতো আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বাসা বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তিনি আরও বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে থাকা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নড়াইলের বাসভবন ও বিএনপি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলুর ময়মনসিংহের বাসভবন, যশোরে বিএনপি কার্যালয়, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
‘আজ অসহযোগ আন্দোলনসহ চলমান আন্দোলনে ছাত্র জনতাকে হত্যাকারীদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে হবে।’
তিনি নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব দেশবাসীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্রজনতার এক দফা আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার এবং একইসাথে নিজ নিজ এলাকায়ও আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখারও রাখার আহবান জানান। একইসাথে তিনি সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ছাত্রজনতার চলমান গণআন্দোলনে তাদের পাশে থাকার আহবান জানান।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্র জনতার দাবি মেনে ক্ষমতা থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর আহবানও জানান।
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/জেবি/ইএস)