হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তা, ব্রিটিশ সরকারের অনিচ্ছা নাকি পদ্ধতিগত বাধা?
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশে ছেড়েছেন। তিনি এখন ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। এখন তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেবে কি না— তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রক্রিয়াগত কারণে আশ্রয় পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা মঙ্গলবার অনলাইন সংস্করণে এক প্রতিবেদনে কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, শেখ হাসিনা ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়েছেন। কিন্তু এখনো সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পাননি। আপাতত ভারতে রয়েছেন তিনি।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা যে পদ্ধতিতে ব্রিটেনের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। ওই পদ্ধতিতে কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না ব্রিটেন। সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই তথ্য পেয়েছে ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কিয়ের স্টার্মার। সূত্রের খবর, শেখ হাসিনার আবেদন বিবেচনা করে দেখছে যুক্তরাজ্য।
তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে কোনো ব্যক্তি নিকটতম নিরাপদ দেশেই সাধারণত আশ্রয় চেয়ে থাকেন। ওই দফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কঠিন সময়ে ব্যক্তিবিশেষকে আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ব্রিটেনের। সে ইতিহাস গর্বের। কিন্তু ব্রিটেনে পৌঁছে সেখানে আশ্রয় চাওয়ার নিয়ম নেই।
তিনি আরও বলেন, যাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রয়োজন, তারা দেশ ছাড়ার পর প্রথম যে নিকটবর্তী নিরাপদ দেশে পা রাখেন, সেখানেই আশ্রয় চাওয়ার কথা। সেটাই তার নিরাপত্তা পাওয়ার দ্রুততম রাস্তা।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে গিয়ে সেখানে আশ্রয় চাইতে পারবেন না শেখ হাসিনা। আগে থেকে তাকে আবেদন জানাতে হবে আশ্রয়দানকারী দেশের সরকারকে। এ ক্ষেত্রে, হাসিনা সেই সময় পাননি। তাই এখনো তার কাছে সবুজ সঙ্কেত আসেনি।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে প্রথমে ভারতেই পৌঁছেন। সোমবার দেশ ছাড়ার পর এ বিষয়ে প্রথমে গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেলেও ঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সর্বদলের বৈঠকে শেখ হাসিনার ভারতে থাকার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপাতত তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ধাতস্থ হতে কিছু দিন তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানালে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পর সোমবার দেশ ছাড়েন হাসিনা। তার সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন বোন রেহানাও। তাদের বিমান নেমেছিল গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে।
সূত্রের খবর, সেখানেই রাত কাটিয়েছেন হাসিনা। তারপর গিয়েছেন দিল্লিতে। হাসিনার বোনের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। রেহানার কন্যা ব্রিটেনের সংসদ সদস্য। তার পক্ষে ব্রিটেনে পৌঁছনোয় অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে সবুজ সঙ্কেত আসেনি হাসিনার কাছে। তাকে দিল্লিতে রেখে রেহানা ব্রিটেনে চলে যেতে পারেন বলেও দাবি করছে কয়েকটি অসমর্থিত সূত্র।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সরকারিভাবে কিছু জানায়নি ব্রিটেন। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্টার্মার সরকার।
একটি বিবৃতিতে ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক উত্থানের ঘটনার ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ চায়। তারা এও চায় যে, ওই তদন্ত হোক জাতিসংঘের নেতৃত্বে, স্বাধীনভাবে। দীর্ঘ ওই বিবৃতিতে হাসিনার নাম একটি বারও উল্লেখ করেননি তারা।
একটি অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পরে বহুবার লন্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আবেদনও করেছেন।
সূত্রটি আরও বলছে, সেই আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটেন যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে হাসিনার নামোল্লেখ না-থাকাকে অনেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/এফএ/ডিএম)