রূপগঞ্জে শৃঙ্খলা ফেরাতে সর্বদলীয় নেতারা একাট্টা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিক্ষুব্দ মানুষের হামলায় থানা ছাড়েন পুলিশ সদস্যরা। নিরাপত্তার অভাবে তারা এখনো থানায় যোগ না দেয়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতা।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বদলীয় নেতাদের নিয়ে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়, ব্যক্তিগত প্রহরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদের হলরুমে সর্বদলীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল।
এর আগে, রূপগঞ্জবাসীর নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন, বণিক সমিতি, সাংবাদিক, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, হিন্দু খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সভা ও উঠান বৈঠক করে তাদের নিরাপত্তা দিতে নানাভাবে চেষ্টা চালান বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু বলেন, ‘রূপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি।শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ উল্লাসের নামে রাতের আঁধারে দু-এক স্থানে ভাঙচুর করেছে। একদল টোকাই ও মাদকসেবী নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্মে জড়িয়েছে।’ তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে এবং ছাত্রদের মতো সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ছাত্রদের চেতনা, আত্মত্যাগকে ম্লান করে দিতে বিএনপির পরিচয়ে কেউ কোনো অরাজকতা করলে তাকে আটক করে আইনের হাতে তুলে দিন। আমরা রূপগঞ্জের সবাই মিলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে চাই।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন রূপগঞ্জবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘রূপগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় বিএনপির লোকজন নিরাপত্তায় কাজ করবে। এর ব্যতিক্রম কেউ করলে প্রমাণসহ দিন, তাকে বহিষ্কার করা হবে।’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় বর্তমানে সব রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতাসহ সেনাবাহিনীর টহল রয়েছে। আজ থেকে পুলিশ তাদের কর্মে ফিরলে সব ধরনের নিরাপত্তা বহাল থাকবে। যারা হামলা করেছে,লুট করেছে তাদের তালিকা হচ্ছে। আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এতে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিমন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও গাউছিয়া কর্পোরেশনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক বাশির উদ্দিন বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার ছাতাদ সায়েম, আশরাফুল হক রিপন, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনবিষয়ক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইস্রাফিল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন রূপগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ইমদাদুল্লাহ হাশেমী, রূপগঞ্জ থানা যুবদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম।
আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, ইমাম ও খতিব, শিক্ষক, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতারা, হেফাজতে ইসলাম উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দলের থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সভায় তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে নিহত ছাত্রদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/মোআ)