আগে কদর ছিল না, এখন সোনায় সোহাগা
কিছুদিন আগেও বাজারে বিচিত্র ফলের সমারোহ ছিল। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল সবই পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এখন বেশি চোখে পড়ছে টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন।
এটি মূলত বর্ষাকালীন ফল। এক প্রকার হলুদ রঙের ছোট্ট গোলাকার ফল। টক-মিষ্টি স্বাদের এ ফলটি খেতে অনেকেই ভীষণ পছন্দ করেন।
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠর রসালো ফল শেষ হতে না হতেই লটকন চলে আসে। এবারও ফলন ভালো। আর লটকনের জন্য নরসিংদী জেলার রয়েছে দেশজোড়া খ্যাতি।
লটকন নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার সম্ভাবনাময় ফল। দেশ-বিদেশে এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। লটকন বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হচ্ছে। এটি প্রচুর উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana. একই ফলের অন্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড়াফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ এবং কিছুয়ান। হালকা হলুদ ফলের মোটা খোসা। খোসা ছাড়ালে নরম রসালো অংশ বের হয়ে আসে। এ অংশটি ২-৪টি বীজ দ্বারা বিভক্ত। বীজগুলো মুখে পুড়ে দাঁত দিয়ে সামান্য কামড়ে দিলে জিব রসে ভিজে যায়। টক-মিষ্টি স্বাদটা এমনভাবে জিহ্বায় ছড়িয়ে পড়ে যে চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
গাছের কথায় আসি। লটকন গাছ ৯-১২ মিটার উঁচু হয়। এর আছে পুরুষ এবং স্ত্রী জাত। আলাদা আলাদা ফুলও হয়। হলুদ ফুলের সুন্দর ঘ্রাণ। বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে ফলটি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়। বেশি হয় নরসিংদীতে।
এছাড়া গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ হচ্ছে। সেসব এলাকা থেকে চলে আসছে ঢাকার বাজারে। পাঠানো হচ্ছে বিদেশেও। মজার ব্যাপার হলো লটকন কিন্তু বুনো ফল! আগে বনে পাহাড়ে হতো। ক্রমে লোকালয়ে এসেছে। আর কিছুদিন পাবেন। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে চেখে দেখুন আরেকবার।
লটকন পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর একটি ফল। এটি মৌসুমি ফল হওয়ায় শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। দিনে ৩-৪টি লটকন অনায়াসে খেতে পারেন। আমাদের খাদ্য তালিকায় সবসময় মৌসুমি ফল রাখার চেষ্টা করা উচিত। এতে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, থায়ামিন, ভিটামিন বি, সি ইত্যাদি এবং প্রোটিন ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
রক্ত, হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারী উপাদান আয়রন রয়েছে লটকনে। এটি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপকারী খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
লটকনে থাকা অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম দেহ গঠন, কোষের ক্ষয়পূরণ, ও কোষকলার সুস্থতায় সাহায্য করে।
(ঢাকা টাইমস/১৩আগস্ট/এসএ)