জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন কী বলছে

তানজিলা তাসনিম, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১৪:০৭

ছাত্রদের আন্দোলনে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বুধবার তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জুলাই গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার করা সম্ভব।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণহত্যা বলতে আমরা অগাস্টের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যাও বোঝাচ্ছি, এটার জন্য দায়ী যে ব্যক্তিবর্গ আছেন, উনাদের বিচারের জন্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উনাদের বিচারের জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটা ছোটখাটো গবেষণার মতো করেছি।’

আসিফ নজরুল বলেছেন, ১৯৭৩ সানের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে, যেটা পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধন হয়েছে। সেই আইনে আগস্টের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা, যারা আদেশ দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।’

এই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকেও পুনর্গঠন করার কথাও বলেছেন আইন উপদেষ্টা। বলেন, ‘একটি ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে রিঅর্গানাইজড করার চেষ্টা করছি, আদালতটা পরে করব।’

জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত টিম কাজ করবে উল্লেখ করে অন্তবর্তী সরকারের এ আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যারা যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

আইন উপদেষ্টার এমন বক্তব্য আসার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ‘গণহত্যা’র বিচারে কী আছে তা খতিয়ে দেখেছে ঢাকা টাইমস। এতে দেখা যায়, এই আইনে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা এবং এর সহায়ক কোনো বাহিনীর সদস্যকে আটক ও ফৌজদারি আইনের অধীনে দণ্ডদান করা যায়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে ঘোষিত ‘রোম সনদে’ কোন ক্ষেত্রে এই অপরাধগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হবে তা উল্লেখ আছে।

রোম সনদ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ যেই দেশে সংঘটিত হয়, সেই দেশ যদি বিচারের আয়োজনে অপারগ, ব্যর্থ ও অনিচ্ছুক থাকে; তাহলে অন্য কোনো দেশ জাতিসংঘে আবেদন করলে এই অপরাধগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হবে।

তবে বাংলাদেশ নিজস্ব আদালত গঠনের মাধ্যমে এসব অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। সংবিধান অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলে বাংলাদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এই ট্রাইবুনাল করেছে।

একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচারে ১৯৭৩ সালের ২১ জুলাই ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস’ আইন তৈরি করা হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান এ আইন বাতিল করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ১৯৭৩ সালের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ আইনের আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে ২০০৯ ও গঠনের পরে ২০১৩ সালে আইনের সংশোধন হয়েছে। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়।

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্স) অনুযায়ী বিভিন্ন সময় দেশে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তরিতকরণের মতো গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সব কাঠামো ঠিক রেখে এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়।

এই ট্রাইব্যুনালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিচারকরা সবাই উচ্চ আদালতের। আইনজীবীরা প্রত্যেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেটধারী। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মামলার তদন্ত করেন।

আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও আইনি সুযোগ রেখে তাদের পক্ষে এমনকি পলাতক আসামিদের পক্ষেও আইনজীবী নিয়োগ করা যায়। দণ্ডপ্রাপ্তরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ পান। ফলে স্বচ্ছতায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ খুব নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী জেনোসাইডের সংজ্ঞা বেশ ব্যাপক। এ সংজ্ঞাটি শুধু হত্যাকাণ্ডেই সীমিত নয়, (ক) হত্যা, (খ) মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক যাতনা, (গ) একটি মানব গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া, (ঘ) গোষ্ঠী বিশেষের জন্ম প্রক্রিয়া বন্ধকরণ, (ঙ) একটি গোষ্ঠীর শিশুদের অন্য গোষ্ঠীতে বদলিকরণকে অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী যাত্রাপথে এবং আশ্রয় শিবিরে মৃতদেরও ধরা যায়। এই সংজ্ঞায় ধর্ষিত নারীরাও অন্তর্ভুক্ত।

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

১০০ কোটি টাকার অনুদান নিয়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক কার্যক্রম শুরু

২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল, চালু হবে কাজীপাড়া স্টেশন

সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের দুই মাসের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন

কারাগারে ডিভিশন পেয়েছেন সাবেক ৯ এমপি-মন্ত্রী: কারা মহাপরিদর্শক

মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি

কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৯০০ বন্দি এখনো পলাতক: আইজি প্রিজন্স

ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান কোন স্ট্যাটাসে, এখনো জানতে চায়নি সরকার

আয়নাঘর পরিদর্শন করবে তদন্ত কমিশন

চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা দাঁড়াবে ৩ বিলিয়ন ডলারে: আবদুলায়ে সেক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :