এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:২৭
অ- অ+

সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।

বুধবার (১৪ আগস্ট) এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটের মসজিদসমূহে বাদ মাগরিব তার জীবনীর ওপর আলোকপাত করতঃ বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী) জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম নূরুল হুদা এবং মা মরহুমা আনকুরেন্নেছা বেগম। তিনি আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০ সালে পিএএফ পাবলিক স্কুল, সারগোদা, পাকিস্তান হতে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৬২ সালে পিএএফ একাডেমি, রিসালপুর, পাকিস্তান হতে এফএসসি এবং ১৯৭৭ সালে এয়ার স্টাফ কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

বীর উত্তম সুলতান মাহমুদ ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট তদানীন্তন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালের ১ জুলায় জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন চৌকস বৈমানিক। চাকরিকালীন কর্মকর্তা দেশ বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন।

আইএসপিআর এর এক বার্তায় বলা হয়েছে, আজ কিংবদন্তি কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম এর প্রথম মৃত্যবাষির্কী। তিনি ১৯৭১ সালে দেশপ্রেমের অদম্য চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্জন করেন লালসবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদের বীরত্বগাঁথা এ মহান ইতিহাসের এক অনুকরণীয় অধ্যায়।

তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ২ নম্বর সেক্টরে (মতিনগর ও মেলাঘর) স্থলযুদ্ধে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

একজন বৈমানিক হওয়া সত্ত্বেও স্থলযুদ্ধে তিনি অদম্য সাহসের সাথে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলা কমান্ডার হিসেবে তার পরিচালিত বড় একটি অভিযান হলো চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ধ্বংস ও চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা। এই স্থলযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডান হাঁটুতে শত্রুর বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ সুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে নবগঠিত ‘কিলো ফ্লাইট’ এর অধিনায়কত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন।

তিনি পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অ্যালুয়েটওওও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম বিমান আক্রমণ অভিযানের সূচনা করেন। তার চৌকষ অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট স্বল্পসময়ের মধ্যে মোট ৫০টি দুঃসাহসিক বিমান অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। তন্মধ্যে তিনি ২৫টি অভিযানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। আকাশ থেকে পরিচালিত এসব অভিযানে শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের মনোবল দুর্বল করে যা আমাদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ যুগপৎভাবে স্থলযুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, নবগঠিত বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান এবং আকাশযুদ্ধে অকুতোভয় আক্রমণ পরিচালনা করার মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন।

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৮১ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তার অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকরী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দেশ গঠনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার২০১৮’—এ ভূষিত করে।

তিনি ৩৬ বছর ২২ দিন অবসর ভোগের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট রাতে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর ১৪ দিন। তিনি স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি মমতাজ গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অনিয়মের প্রমাণ পেল দুদক
কোতয়ালী এলাকায় বিশেষ অভিযান, মাদক কারবারিসহ গ্রেপ্তার ১৫
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা