গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করার দাবি
গণমাধ্যমে নতুন ধারা তৈরি ও মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন নবীন-প্রবীণ সংবাদকর্মীরা। গণমাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারসহ নয় দফা দাবিতে তারা মানববন্ধন করেছেন এবং তথ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর তোপখানা সড়কে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনের পর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বলা হয়, বিগত ১৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সরকার ও ফখরুদ্দিনের সেনাসমর্থিত সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিকদের দমন করে এসেছে। সাগর-রুনিসহ সংবাদকর্মীরা খুন, গুম, নির্যাতন, চাকরি হারানোসহ বিভিন্নভাবে নিপীড়িত হয়েছেন।
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা বলেন, ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে দেশের গণমাধ্যমকে খড়গহস্তে নিয়ন্ত্রণ করেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা। গণমাধ্যমকে দলীয় প্রচারমাধ্যমে পরিণত করে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস ও সরকারি টেলিভিশন বিটিভি ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর কোনো বিচার হয়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড। তাই এখন গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরমুক্ত করতে মাঠে নেমেছেন নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র সাংবাদিক ও বাসসের সাবেক বার্তা সম্পাদক মমতাজ বিলকিস বানু বলেন, “ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়েও আমরা দেখছি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ প্রায় সব গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বহাল রাখা হচ্ছে বা পুনর্বাসন করা হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বড় বড় পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।”
বাসস ও বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসরদের অবিলম্বে বরখাস্ত ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।
মানববন্ধনে আরও যেসব দাবি তোলা হয় তার মধ্যে রয়েছে—
- গত ১৮ বছরে রাজনৈতিক কারণে বাসসসহ সকল মিডিয়া হাউজ থেকে চাকরিচ্যুত সকল গণমাধ্যমকর্মীকে সসম্মানে পুনর্বহাল করতে হবে। এবং সকল বন্ধ মিডিয়া হাউজ অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
- গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সাইবার সিকিউরিটি আইন, মানহানি এবং হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হামলা-মামলার শিকার সব সাংবাদিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
- সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে নিহত সব সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
- ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের তল্পিবাহক সাংবাদিক, সমাজ ও দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধবিরোধী ঘাদানিক চেতনায় বিশ্বাসীদের সব মিডিয়া হাউজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
- বিগত ১৮ বছরে বাসস থেকে স্বৈরাচারী হাসিনার দোসররা বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করেছে। যার প্রমাণসহ অভিযোগ দুদকে জমা দেয়া আছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এর সঠিক বিচার ও দোষীদের বাসস থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সাইবার সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনসহ কলোনিয়াল ও নিপিড়নমূলক সকল আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
- অবিলম্বে রেডিও-টেলিভিশন-অনলাইন এবং ছাপা পত্রিকার জন্য সমন্বিত ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে। এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য আর্থিক প্রনোদনার ক্ষেত্রে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
- একই নামে ভিন্ন ভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিবর্তে সত্যিকারের সাংবাদিকদের নেতৃত্বে গতিশীল ও মিডিয়াবান্ধব ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেয়ার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আখতার হোসেন মাসুদ, সমাজকর্মী মো. শামসুদ্দিন, গণমাধ্যমকর্মী বুরহান উদ্দিন ফয়সাল, কাজী মুস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশির।
(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/কেএম)