রাজনীতিতে মেধাবী ও দক্ষতার প্রবেশ ঘটাতে হবে: সারজিস আলম
শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় সারজিস আলম বলেছেন, ‘আপনাদের হয় মেধাবী এবং দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে হবে। অথবা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। কেননা রাজনীতির জায়গায় যদি ভালো মানুষগুলো না যায়, দিন শেষে আপনি এই দেশে যা–ই হোন না কেন, ওই খারাপ মানুষদের দ্বারা আপনাকে শাসিত ও শোষিত হতে হবে।’
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজ মাঠে ছাত্র–জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিমের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সফরের অংশ হিসেবে এই মতবিনিময় সভা হয়। এদিন পৃথক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আরেকটি টিম। এই সফরে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দল প্রতিটি জেলার অভ্যুত্থান ঘটানো ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
এরই অংশ হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় সফরের প্রথম জেলা হিসেবে আজ সকাল আটটায় মুন্সীগঞ্জ আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৪ প্রতিনিধি।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আপনি যদি চান যোগ্য মানুষগুলো, মেধাবী মানুষগুলো দেশের কার্যক্রম পরিচালনায় যাক, আপনি যদি চান দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষিত প্রজন্মটি ওই সংসদে গিয়ে আপনার জন্য নীতি নির্ধারণ করুক, তাহলে হয় আপনাকে রাজনীতিবিদ হতে হবে, না হয় আপনাকে রাজনৈকভাবে সচেতন হতে হবে। কারণ, দিন শেষে রাজনীতির বাইরে কিছুই নাই।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমাদের বাবা–মায়েরা সারা জীবন আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এই সমাজে যে পেশাগুলোর মর্যাদা আছে, সেগুলো হতে হবে। আমাদের বাবা-মায়েরা কিংবা আমাদের অভিভাবকেরা এই স্বপ্ন দেখাননি যে আমাদের ভালো রাজনীতিবিদ হতে হবে। আপনি বাংলাদেশে থেকে যা কিছু করেছেন, যে দায়িত্বগুলো পালন করছেন, যে নীতি সংবিধানে আছে, যে নিয়মকানুন আপনি মেনে চলেন, তার প্রত্যেকটি নির্ধারণ হয় ওই জাতীয় সংসদ থেকে।’
‘বিগত সময়ে পুলিশ কিছু কাজ করেছে, যা তার বাহিনী এবং তাদের এথিকসের (নৈতিকতার) সঙ্গে যায় না। তাদের (পুলিশ) অধিকাংশকে বাধ্য করেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা। তাহলে হাসিনার জায়গায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জায়গায়, প্রশাসন এবং সংসদের মতো জায়গায় আপনাদের মতো ২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের স্পিরিটের (চেতনার) মানুষগুলো যদি অংশ না নেয়, তাহলে কোনো না কোনো ফ্যাসিস্ট দ্বারা কয়েক বছর পর আবারও এই দেশ পরিচালিত হবে’ বলেন সারজিস।
এরপর ছাত্র-জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন সারজিস আলম। বলেন, ‘আপনারা কি এমনটা চান? যদি না চান, তাহলে আপনাদের হয় মেধাবী এবং দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে হবে। অথবা, রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে হবে।’
আন্দোলন কীভাবে সফল হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, ‘গত ১৬ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে স্বৈরাচার সরকারের পতনের চেষ্টা করেছে। তারা সরকারের একটি খুঁটিও টলাতে পারেনি। মেধাবী ছাত্র–জনতা যখন রাজপথে নেমেছে, একটি গ্রুপ তত্ত্বীয় পড়াশোনা করেছে। বাস্তব ইতিহাস ঘেঁটেছে, এগুলোর সঙ্গে রিলেট (সম্পর্কিত) করে কর্মসূচিগুলো দিয়েছে, তখন আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এত এত মানুষ আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছে, এখন সময় হয়েছে আপনাদের তার প্রতিদান দেওয়ার।’
কলেজ মাঠে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তৃতা করেন ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির সমন্বয়ক শ্যামলী সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে, এতে মুন্সিগঞ্জের মানুষের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। আমাদের ছাত্র–জনতা, সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকটি শ্রেণি–পেশার মানুষ যেভাবে এই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, আমরা চাই আবার যদি কোনো ফ্যাসিজম দেখা দেয়, আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব।’
মুন্সীগঞ্জ সফরে সারজিস আলম ছাড়া অন্য সমন্বয়করা হলেন মো. হৃদয়, ইব্রাহীম নিরব, মম, সালেহীন অয়ন, মোবাশ্বের, শ্যামলী সুলতানা, রোহান, ইফতি, তালহা, মো. আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ। সোমবার সমন্বয়কদের এই দলটি নরসিংদী যাবে।
সমন্বয়ক টিম এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ শহরের খালইস্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় তিনটি বৈঠকে মিলিত হন। সারজিস আলমের নেতৃত্বে প্রথম বৈঠকটি হয় গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। প্রথম বৈঠকটি সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ৫০-৬০ জন উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে। তৃতীয় বৈঠকটি হয় স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তিনটি বৈঠকই ওই রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকালে কলেজ মাঠের মতবিনিময় সভায় দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ অংশ নেন। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয়ক প্রতিনিধিদলটি। সে সময় হতাহতের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তারা। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে মুন্সিগঞ্জে গত ৪ আগস্ট তিনজন মারা যান। এ ছাড়া ঢাকায় জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে আরও ছয়জন মারা যান।
বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঢাকা থেকে আসা সমন্বয়কদের দলটি। সে সভায় গত ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনা তুলে ধরেন রাজনীতিকেরা। সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন তারা। এ সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই পীর), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টির একাংশ ও সিপিবির নেতারা অংশ নেন।
(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/এসআইএস)