ওজন ও রক্তচাপ কমায় কলার থোড়! বের করে দেয় কিডনির পাথর
কলা সবচেয়ে এনার্জি প্রদানকারী ফল। এতে এমন অনেক উপাদান পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো ফলে মেলে না। পাশাপাশি কলায় পাওয়া ভিটামিন, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি সুস্থ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগে থাকেন, তবে কলা আশ্চর্যজনক উপকার দেবে।
তবে শুধু কলা নয়, কলার ফুল, ফল থেকে কাণ্ড সবই কিন্তু খাওয়া হয়। কলার থেকেও বেশি পরিমাণ আসরণ থাকে কলাগাছের কাণ্ডে। চলতি বাংলায় যাকে থোড় বলা হয়। কলার কাণ্ড বা থোড়ও যে সমান উপকারী তা খুব কম মানুষই জানেন।
কলাগাছের কাণ্ডের মজ্জাকেই থোড় বলা হয়। থোড় খেতে যেমন ভাল হয় তেমনই পুষ্টিগুণে ঠাসা। তাই আজ থেকে এই কাণ্ড ফেলে না দিয়ে কাজে লাগান রান্নায়। এতে নিজেই পাবেন একাধিক উপকার। কলা গাছের থোড়ের উপকারিতাগুলো জানলে আপনিও অবাক হবেন:
কিডনি স্টোন ও ইউটিআই সমস্যায় উপশম
কলা গাছের থোড় খেলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা কম হয়। প্রতিদিন এক গ্লাস থোড়ের জুস খেলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) জনিত ব্যথা এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কলার কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যার সাহায্যে কিডনিতে ক্যালসিয়াম ক্রিস্টাল তৈরি হওয়া রোধ করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কলার থোড় অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম এবং বি৬। ভিটামিন বি৬ হিমোগ্লোবিন এবং ইনসুলিন গঠনে উপকারী। এর পাশাপাশি এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে। এর কান্ডে পাওয়া পটাসিয়াম কার্ডিয়াক পেশীকে শক্তিশালী করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ওজন কমায়
কলার থোড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে, যার কারণে খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। এমতাবস্থায় আপনি চাইলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এমন জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্ন্যাক্স হিসেবে নিতে পারেন থোড়। এটি খেলে পেট ভরা অনুভূত হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে স্মুদি বানিয়ে বা সিদ্ধ করে নিতে পারেন।
শরীরের টক্সিন দূর করে
শরীরে উপস্থিত টক্সিনকে শরীর থেকে বার করতে সহায়ক থোড়। এছাড়া এটি প্রাকৃতিকভাবে কিডনির পাথর অপসারণেও কার্যকর। আপনি যদি আপনার ডায়েটে থোড় অন্তর্ভুক্ত করেন তবে এটি হজম প্রক্রিয়াকেও সক্রিয় এবং ভাল রাখে। এর সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কলার কাণ্ডে প্রচুর ফাইবার থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু তাই নয়, কান্ডে পাওয়া পটাশিয়াম কার্ডিয়াক পেশীকে শক্তিশালী করে। এর পাশাপাশি এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে
কলার থোড় খেলে হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় না।এছাড়াও এটি কিডনি থেকে প্রাকৃতিকভাবে পাথর দূর করতেও সহায়ক। এর সাহায্যে শরীরে উপস্থিত টক্সিনও শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
শরীরকে ডিটক্স করে
থোড়ের রস খাওয়া শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে আপনার পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। আসলে, এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যার সাহায্যে মলত্যাগ এবং অ্যাসিডিটির সমস্যায় উপশম পাওয়া যায়। অন্ত্র পরিষ্কারের জন্য ফাইবারকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম
আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজমের সমস্যায় অস্থির থাকেন, তাহলে অবশ্যই থোড় খেতে হবে। থোড়ের রস আপনার শরীরে অ্যাসিডিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এর সেবনে পেটের জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তিতেও আরাম পাওয়া যায়।
অ্যানিমিয়ায় উপকারিতা
কলার থোড় খেলে আপনি রক্তস্বল্পতার সমস্যায়ও অনেক উপশম পাবেন। এটি আয়রন সমৃদ্ধ, যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতার লক্ষণ কমাতে পারে।
ইউরিন ইনফেকশন দূর করে
অনেকেই ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যায় ভোগেন। ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে প্রতিদিন একগ্লাস করে খান থোড়ের রস। কিডনি স্টোন থেকে শুরু করে ইউটিআই-পাবেন মুক্তি। থোড়ের মধ্যেকার পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামই এর জন্য দায়ী।
কলার থোড়ের রস যেভাবে বানাবেন
কলার থোড়ের রস তৈরি করতে, প্রথমে কলার কাণ্ডটি ভালভাবে পরিষ্কার করুন এবং তারপরে এটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন এবং পুরু বাইরের স্তরটির খোসা ছাড়িয়ে নিন। এর পর থোড়ের ভেতরের অংশ পিষে এক কাপ জলে মিশিয়ে সেবন করুন। আপনি এর শক্ত খোসা ফিল্টার করতে পারেন। কলার থোড়ের রসে এলাচ যোগ করেও এটি খেতে পারেন। এলাচ এটির স্বাদ বাড়ায়। লেবু বা গোলমরিচ যোগ করে ব্যবহার করতে পারেন।
(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এজে)