ফেসবুকে সহকর্মীদের উস্কানির অভিযোগ, দুই পুলিশ সদস্য রিমান্ডে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সহকর্মীদের উস্কানি দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগের মামলায় দুই পুলিশ সদস্যের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- যশোর পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান (৩২) ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত কন্সটেবল সজিব সরকার (২৭)।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের শাহজাহানপুর থানার এ মামলায় সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. খায়রুল ইসলাম আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এদিকে রিমান্ড শুনানিকালে আসামিরা বলেছেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করার জন্যই তাদের এ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামিদের সোমবার বিকাল ৪টার দিকে যখন আদালতে ওঠানো হয়। তখন তারা চিৎকার করে বলছিল যে, তাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে। তারা কাউকে খুন করেনি, কাউকে গুলি করেনি। স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়েছি এটাই তাদের অপরাধ।
তাদের কাঠগড়া ওঠানোর পর তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদন করেন। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা ফেসবুকে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে একে অপরের সহযোগিতায় বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টসহ জনসাধারনের সেবা বাধাগ্রস্ত এবং বিনষ্ট করার জন্য উস্কানিমূলক বার্তা পোস্ট করছে, যা জনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যবহার হতে পারে। তাই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা দরকার।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করার কারণ উদঘাটন ও অর্থ দাতাদের খুঁজে বের করা দরকার। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং শনাক্তকরণের জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানিকালে আসামিদের আইনজীবী না থাকায় আসামিরা বলেন, আমরা ডিউটিরত অবস্থায় আমাদের ডেকে এনে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরিবারে সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় নাই। তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিকাল থেকে সিনিয়র অফিসাররা আমাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রেখে পালিয়ে যান। আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের হেফাজত করেছি। কোটা আন্দোলনের সময় আমাদের অনেক সহকর্মী মারা গেছে। কেন মারা গেছে?
তারা বলেন, আমাদের অফিসাররা সরকারের দালালি করতে গিয়ে আমাদের জনগণের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় তাদের মরতে হয়েছে। তাই আমরা ৫ আগস্টের পর একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে ফেসবুকে কথা বলেছি। এটাই আমাদের অপরাধ। আমাদের মুখ বন্ধ করার জন্য ডেকে এনে এ মামলা দিয়েছে। স্বাধীন পুলিশ কমিশন চাওয়া কি আমাদের অপরাধ?
এরপর বিচারক বলেন, আপনারা অভিযোগ করেছেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় নাই। এখনই মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, মামলা সম্পর্কে জানান। তখন একজন পুলিশ সদস্যের মোবাইল দিয়ে তারা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পর একজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক তাদের জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/আরজেড/কেএম)