শেষ দিনে রোমাঞ্চের অপেক্ষায় কানপুর টেস্ট
জমে ওঠেছে ভারত-বাংলাদেশ কানপুর টেস্ট। প্রথম দিন ৩৫ খেলার পর বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের খেলা। তবে দুইদিন ভেস্তে গেলেও চতুর্থ দিনে জমে উঠেছে লড়াই। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৩৩ রানে থামলে সবাই ভেবেছে এই ড্র পথেই এগোচ্ছে এই টেস্ট। তবে জয়ে চোখ রোহিতদের। সবমিলিয়ে শেষদিনেও যে জমজমাট লড়াই হতে চলেছে, তা তো অনুমিত। চতুর্থ দিনশেষে এগিয়ে স্বাগতিকরাই।
প্রথম ইনিংসেবাংলাদেশকে ২৩৩ রানে অলআউট করে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকেন ভারতীয় ব্যাটাররা। তবে সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। যার ফলে প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড ৫২। ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ দিনশেষে ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৬ রান তোলে বাংলাদেশ। এখনও পিছিয়ে ২৬ রানে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনে ব্যাট করতে নামবে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে কানপুর টেস্টে রোমাঞ্চকর পঞ্চম দিন অপেক্ষা করছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। তবে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ জাকির হাসান। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার পর আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ বলে ১০ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাকিন হাসান।
জাকিরের বিদায়ের পর ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে ক্রিজে আসেন হাসান মাহমুদ। তবে আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন হাসান মাহমুদ। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ৯ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান হাসান। তার বিদায়ে ২৬ রানে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
হাসানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মুমিনুল হক। মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ দিনের বাকি সময়টা নির্বিঘ্নে পর করে দেন সাদমান ইসলাম। ১১ ওভারে ২৬ রান তোলার পর চতুর্থ দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপরেই ব্যাটিংয়ে নামে ভারত।
বৃষ্টির কারণে আড়াই দিন খেলা না হওয়ায় এই টেস্ট ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তবে ভারত ড্র চায় না, চায় ম্যাচের ফলাফল হোক। সেটার প্রমাণ হল প্রথম ইনিংসে দুই ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল এবং রোহিত শর্মার ব্যাটিং তাণ্ডবে। তাদের মারকাটারি ব্যাটে ৩ ওভারেই ৫১ রান তুলে ভারত। যেটি টেস্ট ইতিহাসেরই দ্রুততম দলীয় পঞ্চাশের রেকর্ড।
তবে এররপর আর এই জুটিকে বেশিদূর এগোতে দেননি মেহেদেী হাসান মিরাজ। মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে পিরে যান ১১ বলে ২৩ রান করা রোহিত শর্মা। তার বিদায়ে ভাঙল ৫৫ রানের জুটি।
রোহিত দ্রুত ফিরে গেলেও শুবমান গিলকে নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে যেতে থাকেন যশস্বী জয়সওয়াল। তুলে নেন অর্ধশতক। ভারতের হয়ে টেস্টে দ্রুততম ফিফটির সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ২৬ বলে ৪৮ রান করা ভারতীয় ওপেনার পরের বলে ২ রান নিলেই ঋষভ পান্তের ২৮ বলের রেকর্ড ভেঙে ফেললেন। তবে ওই ২ রান তুলতে আরও ৫ বল খেলতে হয়েছে তাকে। ভারতীয় রেকর্ড না হলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্রুততম ফিফটি পেয়ে যান জয়সওয়াল।
এই জুটিতে ভর করে দশ ওভার এক বলেই দলীয় শতক পূর্ণ করে ভারত। টেস্ট বল বাই বলের হিসেব আছে এমন ম্যাচে এত কম ওভারে আর কোনো দল ১০০ করতে পারেনি। আগের রেকর্ডটি ছিল ভারতেরই। ২০২৩ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বারো ওভার ২ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করেছিল ভারত।
ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছিল এই অবশেষে চা বিরতির আগে এই জুটিকে থামান হাসান মাহমুদ। হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান বিধ্বংসী হয়ে ওঠা যশস্বী জয়সওয়াল। আউট হওয়ার আগে করেন ৫১ বলে ৭২ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৭২ রানের জুটি।
যশস্বী জয়সওয়ালের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। বিরাট ও শুবমান মিলে চা বিরতির আগের বাকি সময়টুকু নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন। এই জুটির ১১ রানে ভর করে ১৬ ওভারে ১৩৮ রান করে চা বিরতিতে যায় ভারত।
চা বিরতি থেকে ফিরেই শুবমান গিলকে ফেরান সাকিব। সাকিবের বলে লং অফে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান গিল। আউট হওয়ার আগে করেন ৩৬ বলে ৩৯ রান।
গিলের বিদায়ের পর ফিরে যেতে পারতেন কোহলিও। তবে তাকে রান আউট করানোর সুযোগ মিস করেন খালিদ আহমেদ। ঘটনা ইনিংসের ১৯তম ওভারে। খালেদের বল কিছুটা ঠেলে দিয়ে রান নেওয়ার লক্ষ্য ছিল কোহলির। অপর প্রান্ত থেকে প্রাথমিকভাবে পন্থ সাড়া দিলে এগিয়ে যান কোহলি। উইকেট ছেড়ে পুরোপুরি বেরিয়ে যান এই ব্যাটার। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত বদলে কোহলিকে নিষেধ করেন পান্ত। এমন দোটানার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কোহলি। উইকেটের মাঝে এসে রীতিমত থেমে যান। এই সুযোগে খালেদ দ্রুত দৌড়ে এসে বল হাতে তুলে নিলে আর ক্রিজে ফেরার চেষ্টাই করেননি কোহলি। তবে, অবিশ্বাস্যভাবে সেই বল হাত দিয়ে স্ট্যাম্পে না লাগিয়ে ছুঁড়ে মারেন খালেদ। যা স্ট্যাম্পের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যার ফলে জীবন পান কোহলি।
খালিদ ব্যর্থ গেলে গিলকে ফেরানোর পর আবারও ভারত শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। এবার তার শিকার হন ঋষভ পান্ত। সাকিবের বলে লং অনে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন পান্ত। তার বিদায়ে ১৫৯ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত।
১৫৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। এই জুটিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৩৩ রান টপকে লিড নেয় ভারত।
তবে এরপরেই আবারও ভারত শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। এবার তিনি ফেরান জীবন পাওয়া বিরাটকে। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বিরাট ৩৫ বলে ৪৭ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। মাত্র তিন রানের জন্য অর্ধশতক মিস করেন তিনি।
কোহলির বিদায়ের পর বেশিসময় ক্রিজে থাকতে পারেননি রবীন্দ্র জাদেজা। মিরাজের বলে কাভারে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাদেজা। তার বিদায়ে ২৬৯ রানে ৬ উইকেট হারায় ভারত।
রবীন্দ্র জাদেজার পথ ধরে সাজঘরে ফিরে যান রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। তাকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান অর্ধশতক তুলে নেওয়া লোকেশ রাহুল। জাদেজার পর রাহুলকেও ফিরিয়েছেন মিরাজ। স্ট্যাম্পিং হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৬৮ রান করেছেন তিনি।
লোকেশ রাহুলের বিদায়ের পর একই ওভারে সাজঘরে ফিরে যান আকাশ দীপও। তার বিদায়ে ২৮৫ রানে ৯ উইকেট হারায় ভারত। এরপর এক উইকেট হাতে রেখেই ইনিংস ঘোষণা করেন রোহিত শর্মা।
(ঢাকাটাইমস/৩০ সেপ্টেম্বর/এনবিডব্লিউ)