তুরাগে বিএনপি নেতার সভায় মূল মঞ্চেই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা, দর্শক সারিতেও একই চিত্র!

রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়ায় প্রতিবাদ সভা করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী মোস্তফা জামান। ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতা ছিলেন সভার প্রধান অতিথি। কিন্তু সভা মঞ্চের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা ও ট্রল।
নামে বিএনপির প্রতিবাদ সভা হলেও সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগের পদধারী নেতারাও। এমনকি দর্শক সারিতে উপস্থিত অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক ছিলো বলে অভিযোগ খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের।
শনিবার বিএনপি নেতা হাজী মোস্তফা জামানের পক্ষে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভা মঞ্চে সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা, হাজী জহির, আজাহারুল ইসলাম আজাসহ কয়েকজন পদধারী বিএনপি নেতা উপস্থিত থাকলেও অন্য যারা ছিলেন তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি সভায় উপস্থিত থাকা প্রায় দুই/তিনশত লোকের মধ্যে ৫০ শতংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শনিবারের এ সভাটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছেন এবং বিভিন্নভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে, যেসব নেতা বা শ্রোতা মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন তাদের অধিকাংশই তিন মাস আগেও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের পক্ষে মিটিং মিছিলে বেশ সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদলের পর পর তারা এখন বিএনপি নেতার মিটিংয়ের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির অনেকের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি একজন পদধারী নেতা বলেন, গতকাল হাজী মোস্তফা জামান যে প্রতিবাদ সভাটি করেছেন সেখানে উপস্থিতির ৫০ ভাগই আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দুই মাস আগেও। তারা এখন ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির মিটিংয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় ওই নেতা আরও বলেন, রাজধানী তুরাগের বাউনিয়া এলাকাটি ফ্যাসিবাদ সরকারের সাবেক এমপি ও উত্তরার ছাত্র-জনতা হত্যার মূল নায়ক হাবিব হাসানের নিজ গ্রাম এবং তার নানাবাড়ী এলাকা হওয়ায় বিএনপির তেমন কোন কার্যক্রম গত ১৮ বছরে পরিচালনা করা যায়নি।
সামান্য কিছু বাসিন্দা যারা বিএনপিমনা ছিলেন তারাও আওয়ামী লীগের সাথে মিল মিশে একাকার ছিলেন। কিন্তু মিটিংয়ের পর দেখা গেছে সম্পূর্ন বিপরিত চিত্র।
প্রতিবাদ সভার মূল মঞ্চেই বসা ছিলেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন পদধারী নেতা। তাদের অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, যুবলীগনেতা সোহেল রানা, সানাউল্লাহ, খুনি হাবিব হাসানের বোনের জামাই ইসহাক, কৃষক লীগ তুরাগ থানার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাশালী নেতা সেলিম মাদবর, হাজী আব্দুল্লাহ ও আশরাফ খান। তারা সবাই হাবিব হাসানের আত্মীয় এবং শুভাকাঙ্খী। এর বাইরে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া আবু তাহের আবুল খানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা হাজী মোস্তফা জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গা হুমকি ধামকি, দখল চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে সর্তকও করা হয়েছে। এ
ছাড়া গত ১৮ বছর যারা আওয়ামী লীগের হয়ে এলাকায় মাতবরি করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নিয়ে দলভারি করার শক্ত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হকের কাছের লোক হওয়ায় কোনো অভিযোগের বিষয়ে তোয়াক্কা করছেন না বলে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে খারাপ কিছু লেখা হলে প্রায়ই তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে হাজী মোস্তফা জামানের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/এসআইএস)

মন্তব্য করুন