মালয়েশিয়ায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, খাস্তগীরের পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত নিয়োগাদেশ বাতিল

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর এর নিয়োগ আদেশ বাতিল করেছে সরকার। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সেই নিয়োগের ১০ দিন পর তা বাতিল করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রবিবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপহাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরের পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।’
খাস্তগীর বিসিএস ২০তম ব্যাচের (পররাষ্ট্র ক্যাডার) কর্মকর্তা। ১০ দিনের মাথায় তার নিয়োগাদেশ কেন বাতিল করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভকারী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দেশটি মামলা করতে উস্কানি দেন এই কূটনীতিক। এছাড়াও তিনি তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ওই বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেন।
ধারণা করা হচ্ছে এসব অভিযোগের কারণেই তার নিয়োগাদেশ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরমধ্য দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় কোনো কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়ে তা বাতিল করল। এর আগে ২০২১ সালে কূটনীতিক সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারকে ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে মাসুদ মাহমুদ খন্দকারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে সেই নিয়োগাদেশ বাতিল হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, জুলাই–আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সহমর্মিতা জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশের ছাত্র–জনতার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে একটি সমাবেশ করেছিলেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। তারা মালয়েশিয়ার নাগরিকদের সহযোগিতাও কামনা করেন।
ওই সমাবেশের পর কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাত্র-শিক্ষকদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে কাজাং থানায় রিপোর্ট করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকেরা নানামুখী হেনস্তার শিকার হন। কাজাং থানায় অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি অংশ অভিযোগ করেন।
তিনি বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে যুক্ত লোকজনকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায়, খোরশেদ আলম খাস্তগীর মালয়েশিয়াপ্রবাসী যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন।
বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত বছর খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্রদূত করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাহরাইন। সাধারণত কোনো দেশ অন্য দেশের রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাবে দীর্ঘদিন সাড়া না দিলে ধরে নেওয়া হয়, প্রস্তাবিত ব্যক্তিকে স্বাগতিক দেশটি কূটনীতিক হিসেবে গ্রহণে রাজি নয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও ওয়ারশোতে খোরশেদ খাস্তগীরের নিয়োগ বহাল রাখে।
খোরশেদ আলম খাস্তগীর ২০০১ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। কূটনীতিক হিসেবে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/এসআইএস)

মন্তব্য করুন