পদ্মায় মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, রাজবাড়ীর জেলেদের মাথায় হাত
ভরা মৌসুমেও রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে দেখা মেলেনি ইলিশের। জাতীয় এই মাছটি জেলেদের কাছে এখন সোনার হরিণের মতো। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না মেলায় তারা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
উড়াকান্দাঘাট এলাকায় জেলেরা বলছেন, পদ্মায় ইলিশের আকাল পড়েছে। আগে যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ জালে আটকা পড়ত, সেখানে জালে এখন তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি।
জেলেরা জানান, একসময় প্রতি খেও বেড়াজালে এক থেকে দেড় মণ করে ইলিশ পাওয়া যেত, জাল তুলতে কষ্ট হতো। অথচ এখন সারা দিনে খুবই কম ইলিশ পাওয়া যায়। ভাগ্যচক্রে সারা দিনে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কেজি ইলিশ পাওয়া গেছে। তবে বেশিরভাগ জেলে ৩-৪ কেজি করে ইলিশ পেয়ে থাকেন। অনেক জেলে খালি হাতে বাড়িতে আসেন।
এদিকে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় সাগর থেকে ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মায় আসে।
এনিয়ে রাজবাড়ী সদরের গোদার বাজার, সোনাকান্দর, উড়াকান্দা এলাকার কয়েকজন জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ থাকবে। আমরা ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নদীতে নামব না। কিন্তু বাইরের জেলেরা এসে ঠিকই মাছ মেরে নিয়ে যাবে। মৎস্য বিভাগসহ প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। নদীতে অভিযান চলাকালে দেখা যায়, যেদিকে অভিযান চলে তার উল্টো দিকে জেলেরা মাছ ধরে। মৎস্য বিভাগের সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যক্তির আঁতাত থাকে। যারা অভিযানের তথ্য জেলেদের দিয়ে দেয়। এই বিষয়গুলো প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের প্রদীপ হালদার (৬২) নামে এক জেলে বলেন, মাছ ধরা আমার বাপ-দাদার পেশা। বর্তমানে এ পেশা লাভজনক না হলেও ধরে রেখেছি জীবিকার তাগিদে। আমার মাছ ধরার বয়স ৩০ বছরের কম না। ১৯৯০ সালের পর থেকে এই পদ্মায় মাছ শিকার করি। বাপ-দাদার কাছে শুনেছি ১৯৮৮ সালের বন্যার পর পদ্মায় ইলিশের আকাল শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই ইলিশের আর সোনালি দিন ফেরেনি। তারপরও এই পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি। কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তান বা পরের প্রজন্ম এই পেশায় আসুক। অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করেছে।
তিনি আরও বলেন, মাছ যা পাই তা বিক্রি করে আমার পোষায় না। পদ্মায় মাছ শিকারে গেলে ৫-৬ জনের কমে যাওয়া যায় না। সবার দিনের একটা হাজিরা আছে। নৌকার তেল খরচ, জালের খরচ, দাদনের টাকা ইত্যাদি মিলে অনেক খরচ। কিন্তু মাছ বিক্রি করে আমরা লাভ করতে পারছি না। আবার ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই ২২ দিন কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
এদিক বাজারে ইলিশের চড়া দাম। নিম্নবিত্তরা তো আগে থেকেই খেতে পারেন না ইলিশ। আবার এখন মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে মাছটি। সচেতন ক্রেতারা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে বাজার তদারকি ও মনিটরিং করলে কিছুটা স্থিতিশীল হবে ইলিশের দাম।
(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/ইএস)