বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নির্মম নির্যাতন করেছে হাসিনা: দুদু
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, “তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নির্মম নির্যাতন করেছে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।”
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া'র সব মামলা প্রত্যাহার এবং দৈনিক দিনকালের প্রকাশক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে দেশে আসার ব্যবস্থার দাবিতে’ এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দুদু বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। ১৯৭১ সালে জাতীয় বীর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর কারাগারে ছিলেন। আর যারা স্বাধীনতার কাণ্ডারি দাবি করে তারা হয় পাকিস্তানের জেলে ছিল আর বাকিরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আরাম আয়েশে ছিল। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দুটি মাসুম বাচ্চা নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেলে ছিলেন। আজ পর্যন্ত তিনি শত শত মামলা মাথায় নিয়ে আছেন। কিসের জন্য? দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য। এই মানুষটা তার পুরো জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য। দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। বেগম খালেদা জিয়া এদেশের নারীদের জন্য যা করেছেন পৃথিবীর আর কোনো দেশে কেউ এরকম করেনি। তিনি কৃষকদের ঋণ মওকুফ করেছেন। সারের দাম কমিয়েছিলেন। তিনি দেশের জন্য যা করেছেন আজ পর্যন্ত কেউ তা করতে পারে নাই।”
তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনেতা তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমান তার পুরো তারুণ্যটা দেশ থেকে বাইরে গিয়ে কাটাতে হয়েছে। তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জোর করে বিদেশে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় মিডিয়াতে তার বক্তব্য প্রচার করতে দেয়নি। অথচ ওনাদের দুজনের মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা যত হামলা-মামলা গুমের শিকার হয়েছে পৃথিবীর আর কোনো রাজনৈতিক দল এর শিকার হয়নি। তাদের একটা মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। শেখ হাসিনার আমলে যেমন হাজিরা দিতো হতো এখনো দিতে হচ্ছে। আমাদের অনেক নেতা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আসামি হয়ে জেলে আছে। আপনি গণতন্ত্র চাইবেন আর গণতন্ত্রের সৈনিকদেরকে জেলে রাখবেন, তাদের মাথার ওপর মামলা রাখবেন এটা তো হয় না।”
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “এক মাসের আন্দোলনে যাদের মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়েছে। আর যারা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছে তাদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। কেন?”
“আমরা এ সরকারকে সমর্থন করি শুধুমাত্র যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়”- যোগ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে দুদু বলেন, “সংস্কার করেন কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। বাংলাদেশের মানুষ সময় দেয় কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা নিলে তাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। আপনারা তিন, ছয়, নয় মাস সময় নিবেন নেন, কিন্তু কীভাবে কী করবেন একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেন। যাতে আমরা জানতে পারি এই সময়ে এই হচ্ছে।”
কৃষকদলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, “এই সরকার আমাদের ভালোবাসার সরকার। বিএনপির সমর্থিত সরকার। সে সমর্থন কার্যকর করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন খেলা হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র খেলছে। বিদেশ থেকে খেলছে। দেশের মধ্যে অনেকে খেলছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দেওয়া যাবে না। তারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। দেশের মর্যাদা, শিল্প কৃষি সবকিছু ধ্বংস করেছে। ফ্যাসিবাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই।”
শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “গঙ্গায় গেছেন ভালো করে পরিষ্কার হোন। মন পরিষ্কার করেন তারপরে ভেবেচিন্তে দেখা যাবে। অনেকে বলে ৩০ বছর ৬০ বছরের মধ্যে আপনারা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, কৃষকদল নেতা এসকে সাদি, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/জেবি/এফএ)