কৃষকের নতুন ভীতি ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ পোকার আক্রমণ

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
  প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৭| আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৫
অ- অ+

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ, নবাবপুর ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে এ পোকা ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জুলাই-আগস্টে পরপর তিন দফা বন্যায় জনপদে কৃষি খাতে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে আগামীতে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এর মাঝে কৃষকের নতুন ভীতি ফসলবিনাশী ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ পোকার মারাত্মক আক্রমণ।

ফসলের জন্য ক্ষতিকর এ পোকা দমনে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে কৃষি বিভাগ। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও এই পোকা দমন করা যাচ্ছে না।

সোনাগাজীর আমিরাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কালো রঙের অসংখ্য পোকা ফসলের মাঠে, রাস্তায়, বাড়িঘর ও আশপাশের বন-জঙ্গলে বিচরণ করছে। পুকুর, ডোবা-নালাসহ আমন ধানের মাঠে পানি থাকলেও পোকাগুলো পানির ওপর দিয়েই ভেসে বেড়াচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বন্যার পর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন তারা। এছাড়া বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজি, লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙে, পাটশাক আবাদ করেছেন। সপ্তাহখানেক পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী হতো। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ। পোকার আক্রমণ কমাতে জমিতে কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানান তারা।

পোকার আক্রমণে ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন কৃষকরা। একই কথা বলছেন ফুলগাজী উপজেলার কৃষকরাও। সেখানেও ফসলের মাঠে এ পোকার আক্রমণ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২ শতক জমিতে লাউ গাছের চারা রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ এ পোকা এসে সবকটি গাছের মূল কেটে দিয়েছে। এতে গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি। পোকাগুলো কীটনাশকের পানিতে রাখলেও মরে না।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘এত পোকা আমার ৫৫ বছরের জীবনে কখনো দেখিনি। দেখতেও কেমন ভয় লাগে, কাছে গেলে শরীরে উঠে যায়। জমির পাশাপাশি এখন বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে। এভাবে হলে মাঠের ফসল আর বাড়িতে তোলা সম্ভব হবে না।’

কৃষক মোস্তফা বলেন, ‘বন্যার ক্ষতি কাটাতে ৬০ শতক জমিতে আগাম শাক-সবজি আবাদ করেছিলাম। এখন সেগুলোও পোকায় নষ্ট করে ফেলছে। চেষ্টা করেও ফসল বাঁচাতে পারছি না।’

ফসলের জন্য ক্ষতিকর এ পোকা দমনে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, এ পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পোকা দমনে ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের টিম কাজ করছে। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

একই প্রসঙ্গে ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের মনিপুর ও মুন্সীরহাটের দক্ষিণ শ্রীপুর এলাকায় পোকার আক্রমণ বেশি দেখা গেছে। পোকার উপদ্রব ঠেকাতে তিন ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়েছে। কীটনাশক নাইট্রো ও কোরাজেন মিশ্রিত স্প্রে করে পোকা দমন করা হচ্ছে। বন্যার সময় কিছু কীটের লার্ভা ফসলের মাঠে আগাছার সঙ্গে মিশে থাকায় এ পোকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফেনী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন মিলন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যা এ পোকার উপদ্রবের অন্যতম কারণ হতে পারে। পোকাটি সাধারণত মাঝারি ঠান্ডা ও গরমে বেশি বংশবিস্তার করে। বর্তমান আবহাওয়া এই পোকার জন্য সবচেয়ে বেশি অনুকূল, যা আমাদের জন্য বাড়তি শঙ্কার বিষয়।’

জেলায় প্রথমবারের মতো এ পোকার উপদ্রব হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন। এখন পর্যন্ত সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ও আমিরাবাদ এবং ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর এলাকায় এ পোকার দেখা মিলেছে। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বালাইনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও এতে যুক্ত করা হয়েছে। পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে জমিতে আলোর ফাঁদ ও পাখি বসার মতো কিছু বসাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা