আ.লীগের নেতৃত্বে আসতে চান সোহেল তাজ, তবে দিলেন শর্ত
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ এখন দেশান্তর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়েছেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও লাপাত্তা। তাদের সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি এরইমধ্যে গ্রেপ্তার, অনেকে আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়েছেন। দেশেও আত্মগোপনে আছেন কেউ কেউ।
এই পরিস্থিতিতে কে ধরবে ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের হাল? এমন প্রশ্ন যখন জনমনে, তখন দলটির নেতৃত্বে আসার ঘোষণা দিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও তাজউদ্দিন পুত্র সোহেল তাজ।
শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘শতাব্দীর কণ্ঠস্বর তাজউদ্দীন আহমদ: কন্যার চোখে, পুত্রের চোখে’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপক কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল সোহেল তাজের কাছে জানতে চান, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ এখন দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। পঁচাত্তরের পর দলটির দুর্দিনে হাল ধরেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন (সোহেল তাজের মা)। এবারও এই পরিবার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে যাচ্ছে কি না?’
এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরার ইচ্ছাপোষণ করেন সোহেল তাজ। তবে এক্ষেত্রে দিয়েছেন শর্ত। বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৫ বছরে ব্যাপক গুম-খুন ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি আত্মসমালোচনা করে, বিচারের মুখোমুখি হয়ে পরিষ্কার হয়ে আসে, তবেই তিনি দলটির নেতৃত্ব দেবেন।
সোহেল তাজ জানান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ একটি যুগান্তকারী নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, দিনবদলের সনদের সেই ইশতেহারে একাত্তরের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার—এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে সংস্কার ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হবে। এসব দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন এবং নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন।
কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হওয়ার ছয় মাসের ভেতর সরকার অঙ্গীকার ভাঙতে শুরু করে বলে জানান সোহেল তাজ। তিনি বলেন, তখন তার কাছে মনে হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তার দাবি, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কারকাজে হাত দিয়ে তিনি বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। যার কারণে পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ক্ষমতার প্রতি তার কোনো মোহ নেই জানিয়ে সোহেল তাজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ পদত্যাগ করেনি। আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, অনিয়ম, দুর্নীতির ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ৫ আগস্টের মতো একটা ঘটনা ঘটবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দিনের মেয়ে অর্থাৎ সোহেল তাজের বড় বোন শারমিন আহমদও। তারও ইচ্ছা, আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ছোট ভাই সোহেল তাজ দলটির হাল ধরুক। কিন্তু আওয়ামী লীগ কি তাজউদ্দিন পুত্রের শর্ত পূরণ করবে? দলটি কি কখনো আত্মসমালোচনা করে, বিচারের মুখোমুখি হয়ে পরিষ্কার হয়ে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরবে?
(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন