একগুচ্ছ কবিতা

আকিব শিকদার
  প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২| আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪
অ- অ+

খাঁ খাঁ

আমার এই খাঁ খাঁ বুকে মুখ লুকানোর

সে তো রইল না

আমার রংচটা আম কুড়ানোর দিন ফিরিয়ে দেওয়ার

সে তো রইল না

যার এলোচুলে খেলা করে শৈশবের প্রজাপতি

যার ঘাসে ঢাকা সবুজ বুকে নাক ঘষেছি আমি

সে তো রইল না, সে তো রইল না।

কে আমায় ফিরিয়ে দেবে চুরি যাওয়া কৈশোর

লাটাই ঘুড়ি

কে আমায় নিয়ে যাবে কাশবনের সাদা সমুদ্রে

বাহুতে ধরি

যার নিঃশ্বাসে বিরাজিত বৃষ্টির গন্ধ

যার দৃষ্টিতে কাজল দীঘির গহিনতা দেখেছি আমি

সে তো রইল না, সে তো রইল না।

তামার বিষ

যেটুকু অর্থ পেয়ে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়

সে টুকু অর্থবিত্ত দিও না আমায়।

বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- ‘তামার বিষ’

সেই তামার বিষে যেন না ধরে আমায়।

এত টাকা দিয়ে আমি করব কী, যে টাকা পেলে

নিজের উত্তরাধিকার নাম লেখাতে যায়

অলস ভবঘুরে আর বখাটেদের খাতায়

এতো ধনের মালিক তুমি করো না আমায়।

টাকার অহংকারে বউ ছুটবে হাটে, গয়নাঅলার সাথে

বলবে কথা হেসে

শাড়ি চুড়ি জুতোর দোকান, বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে গা ঘেঁষে

ভাবি ডেকে জুতো বিক্রির ছলে হাত বুলাতে চাইবে পায়-

অর্থের কুপ্রভাব যদি পেয়ে বসে আমায়।

ভাত ছিটালে কাক আসে, টাকা উড়ালে মেয়ে মানুষের

হয় না অভাব

ঈষৎ হেসে তুলে দেবে সবুজ গেলাসে রঙিন সরাব

নগরনটীর দল। কিছু তোষামোদকারী চাটুকার

সামনে দেবেই স্যালুট- পেছনে লাত্থি দেখাবে অবলীলায়।

এত দৌলত দিয়ে আমি করব কী, তামার বিষে

যেন না ধরে আমায়।

ভিনদেশে বিপর্যস্ত

মা আমাকে তার মাতৃসুলভ আচরণে

স্নেহের হাতে তুলে খাইয়ে দিতে চাইতো, আমি দিইনি সম্মতি কখনো

তার বুড়ো আঙুলের নখটা কেমন মড়া ঝিনুকের

ফ্যাকসা খোলসের মতো ছিল বলে।

শৈশবে স্কুলে পৌঁছবার রাজপথে

যেদিন প্রথম দেখেছিলাম শিয়ালের থেতলানো দেহ

টানা তিনরাত ঘুমোতে পারিনি দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে, পারিনি করতে

আহার স্বাভাবিক। চোখের সামনে শুধু উঠতো ভেসে

বিচ্ছিন্ন মস্তক একটা মরা শিয়াল যার উসকোখুসকো চামড়ায়

জমে আছে রক্তের স্তূপ আর তকতকে নীল মাছি।

খুব বেশি খুতখুতে

স্বভাব ছিল আমার। বাবা একবার আমার গামছা দিয়ে

মুছে ছিলেন তার শস্যক্ষেত থেকে ফিরে আসা ঘর্মাক্ত পিঠ,

সেই অপরাধে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার

করে দিয়েছিলাম মূর্খের অপবাদ দিয়ে। এক বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে

আমার যে ছোটভাইটা গায়ের উপর তুলে দিতো পা

আমি এক চড়ে তার কান থেকে রক্ত ঝরিয়ে বুঝিয়েছিলাম

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে যাওয়ার খেসারত।

এখন আমার ঘুম আসে না, ঘুম আসে না রাতে

ছাড়পোকা আর মশাদের উৎপাতে। উৎকট গন্ধে

বন্ধ দম, শৌচাগারের পাশে বিছানায় নেই গা ঢাকা দেয়ার মতো

টুকরো কাপড়। শীতে জুবুথুবু হয়ে যখন কুকড়ে যাই

তোকে বড়ো মনে পড়ে, তোকে বড়ো মনে পড়ে ভাইরে। ঘুমঘোরে একটি পা

গায়ের উপরে তুলে দিবি না আমায়

একটু আরাম উত্তাপ? বল, তুই করবি না

ক্ষমা আমায়...?

ওরা যখন আমাকে নিয়ে এসেছিল ভিনদেশে

বলেছিল কাজ দেবে পাঁচতারা হোটেলে, নিদেনপক্ষে মুদির দোকান তো

জুটবেই কপালে। সূর্য ওঠার আগে

শাবল ক্ষন্তা আঁকশি হাতে লেগে যাই কাজে, নগরের নর্দমা

শোধন এখন আমার কাজ।

যে হাতে ধরিনি গরুর দড়ি গোবর চনার গন্ধ লাগবে বলে

সে হাত ধরে পঁচা ইদুরের লেজ, পলিথিনে মোড়া

মাছি ভনভন করা মাছের পুরনো আঁশ। পরিত্যক্ত আবর্জনা

তুলে নিই পিঠের ঝুলিতে। বড়ো অসহায়, বড়ো অসহায় লাগে মা,

মনে হয় মরে যাই; না গেলে কাজে নিতান্ত বুভূক্ষু

কাটে দিন, পানিটাও এইদেশে কিনে খেতে হয়, টাকা ছাড়া জোটে না

কান চুলকানোর কাঠিটি পর্যন্ত।

একবার, শুধু একবার, মা তোমার গোবর গুলে গৈঠা বানানো হাতে

একমুঠো ভাত খাইয়ে দিয়ে যাও।

বাবা, ও বাবা, আমার গায়ের সবচেয়ে সুন্দর যে জামাটি

তাতে মোছো তোমার ভাত খেয়ে না ধোয়া হাত। তোমার সফেদ দাড়ির ভাজে

তরকারির যে ঝোল লেগে থাকে

সেই ময়লাটি জিহ্বায় চেটে তুলে নিতে বড়ো ইচ্ছা জাগে আমার।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চট্টগ্রামে মাইক্লোর নতুন শোরুম উদ্বোধন করলেন তাহসান খান ও তাসনিয়া ফারিণ
সামনে ‘সেন্টারিস্ট রাজনীতি’ বিপদের সম্মুখীন হতে পারে, আশঙ্কা রিজভীর
ক্রিকেটারদের পুরো পারিশ্রমিক এখনও দিতে পারেনি রাজশাহী
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা