ওজন-ডায়াবেটিস থেকে ক্যানসার, জিরাপানি জব্দ রাখে আরও বহু রোগ
জিমে যাওয়া, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মানা, বাইরের খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা— প্রতিদিনের জীবনে এমন হাজার নিয়ম মেনে চলেও মেদ ঝরতে চায় না কিছুতেই। আসলে রোগা হওয়ার পর্বে কী খাচ্ছেন, সেটা খুব জরুরি।
পেটের মেদ গলিয়ে ফেলার ইচ্ছে থাকলে শরীরচর্চা ও ডায়েটের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। অবশ্যই খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে এমন কিছু খাবার, যা কিনা মেদ ঝরানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। শরীরের মেদ ঝরানোর এমনই এক মহৌষধ হলো জিরা। রান্নাঘরে থাকা এই মশলাই কিন্তু সুস্বাস্থ্যের কারিগর। তাই তো চিকিৎসকরা সবাইকেই নিয়মিত জিরা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
জেনে অবাক হবেন, এক চিমটি পরিমাণ জিরার গুঁড়া আপনার বাড়তি ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জিরার গুঁড়া দ্রুত শরীরের ওজন কমায়, শরীরের চর্বি কমায় এবং প্রাকৃতিকভাবে শরীরের অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
বিশেষ করে জিরার পানি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বেশি উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস জিরাপানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী হতে পারে। সকালে খালি পেটে জিরাপানি পানে যেসব বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়-
দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক
জিরাপানি ভালো হজমে সহায়তা করে এবং দেহ থেকে টক্সিন বের করতে পারে। পরিপাকক্রিয়া ঠিক থাকলে, শরীর থেকে টক্সিন সহজেই পরিষ্কার হয়, ফলে ওজন হ্রাস এবং ফ্যাট কমে। তাই নিয়মিত জিরা পানে দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
খালি পেটে জিরাপানি পান ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জিরা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
জিরা পটাশিয়াম, আয়রন এবং ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। নিয়মিত জিরাপানি পান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি, ঘনঘন অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাকেও কম করতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
জিরাপানিতে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা শরীরের সঠিক কর্মকাণ্ড বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, এটি লবণের নেতিবাচক প্রভাবগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
লিভারের জন্য উপকারী
জিরাতে লিভারের ডিটক্সিফিকেশন বৈশিষ্ট্য বর্তমান। তাই জিরাপানি পান লিভারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। এটি ডাইজেস্টিভ এনজাইম উৎপাদন বাড়ায়। নিয়মিত জিরার পানি পানে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়ার পাশাপাশি, পিত্ত উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রক্তাস্বল্পতা নিরাময়ে সাহায্য করে
আয়রন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির মধ্যে একটি। এটি শরীরের সঠিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্যও আয়রন প্রয়োজনীয়। এটি রক্তাল্পতা নিরাময়ে সাহায্য করে। আয়রনের ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে, নিয়মিত জিরা পানি পান করতে পারেন।
ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে
জিরার পানিতে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
হৃদরোগের জন্য উপকারী
জিরার পানি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত জিরা পানি পানে হৃদরোগজনিত নানা জটিলতা কমে।
ত্বক ও চুলের উপকারী
জিরার পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি শরীরকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে। এর ফলে ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং উজ্জ্বল থাকে। এছাড়াও জিরা পানি ব্রণের সমস্যা দূর করে এবং সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। জিরার পানি চুলের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি, চুল পড়া প্রতিরোধ করা, খুশকি দূর করা এবং অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দূর করতেও অত্যন্ত সহায়ক।
গর্ভবতী নারীর উপকারী
গর্ভবতী নারীর শরীর ঠিক রাখতে জিরা বেশ উপকারী। এই সময় হবু মায়েদের কনস্টিপেশন এবং হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। জিরা এই সমস্যা কমাতে দারুন উপকারে লাগে। গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত আরও সব লক্ষণ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো হবু মায়েদের প্রতিদিন ১ গ্লাস গরম দুধে হাফ চামচ জিরা এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘুমে সাহায্য করে
যাদের রাতের বেলা ভালো করে ঘুম আসে না, তারা প্রতিদিন ঘুমনোর আগে ১ চামচ চটকানো কলার সঙ্গে হাফ চামচ জিরা পাউডার মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। ওষুধটি খেলে ঘুমের আর কোনো সমস্যা হবে না। মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা ঘুম আসার ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।
(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন