এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল: জাল সনদ ও অব্যাহতির পরও অধ্যক্ষের চেয়ারে সোহাগ!

তদন্ত কমিটিকে হাত করে প্রতিষ্ঠান দখলে ফন্দির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৬
অ- অ+

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই হত্যা মামলার আসামি আনিসুর রহমান সোহাগের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ উঠেছে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পরও জোর করে অধ্যক্ষের চেয়ার দখলে রাখার। এমনকি নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করে সই করছেন নথিপত্রে।

এখানেই থেমে নেই সোহাগ। তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্যকে হাত করে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটিই দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান খান মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোহাগের সনদ জাল হওয়ায় গত নভেম্বরে তাকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি স্বভাবসুলভ প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

এর আগে ঢাকাটাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার একের পর এক নানা জালিয়াতির কথা। এর মধ্যে ভুয়া সনদে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ হওয়ার অভিযোগও ছিল। প্রতারণা আর জালিয়াতি করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। দখল করেছেন অন্যের সম্পদ। এসব করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের পরিচয়ে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সরকার পিস স্কুল বন্ধ করে দেয়। এ সময় আনিসুর রহমান সোহাগের পূর্বপরিচিত ও ব্যবসায়ী পার্টনার জেড এম রানা ও খান মো. আক্তারুজ্জামানের সহায়তায় লালমাটিয়াস্থ পিস স্কুল কিনে নিয়ে সেখানে রেডব্রিজ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ সেটি বন্ধ করে দেয়। পরে রেডব্রিজ স্কুলটি এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সঙ্গে একীভূত হয়।

অভিযোগ আছে, স্কুলটি দখলে নিতে সোহাগ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস হাফিজুর রহমান লিকু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আমির হোসেন আমুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।

এদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সোহাগ জেড এম রানাকে জামায়াতের লোক বলে প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। স্কুলের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দেননি রানাকে। জেড এম রানা নিজ খরচে মিরপুরে এই স্কুলের শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। সেটিও দখলে নেন সোহাগ।

এরপরই মূলত অভিযোগ ওঠে যে সোহাগ উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর আর পড়ালেখা করেননি। তখন তড়িঘড়ি করে ইবাইস ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ/এমবিএ সনদ সংগ্রহ করেন তিনি। ২০১৬ সালে সংগ্রহ করা এই সনদের বৈধতা নেই, কেননা ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ইবাইস ইউনিভার্সিটির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমেরই কোনো বৈধতা নেই।

আনিসুর রহমান সোহাগের সনদ জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসায় এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও গভর্নিং বডি খান মো. আক্তারুজ্জামান তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেন এবং স্কুলের একজন পরিচালকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং একজন পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে এবার পুরো স্কুল দখলে ফন্দি-ফিকির করছেন সোহাগ। নিজেকে স্কুলের চেয়ারম্যান দাবি করে বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করছেন তিনি।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খান মো. আক্তারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আনিসুর রহমান সোহাগ স্কুলের একজন পরিচালক ও অধ্যক্ষ। তার সনদ জাল হওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় আমরা তাকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছি। কিন্তু তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তিনি জোর করে চেয়ার দখল করে আছেন।’

সোহাগের অনিয়ম ও সনদ জালিয়াতি অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ অভ্যন্তরিণ তদন্ত কমিটি গঠন করার জানিয়ে খান মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কিন্তু তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও স্কুলের আরেক পরিচালক গোলাম মোস্তাফাকে নিয়ে চক্রান্তে মেতেছেন সোহাগ। তারা পুরো স্কুল দখলে নেওয়ায় চেষ্টা করছে। এমনকি সরকারের তদন্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সোহাগ।’

অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে সোহাগের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনেও তিনি সাড়া দেননি।

জানা যায়, আনিসুর রহমান সোহাগ একসময় পোশাক কারখানা ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির চাকরি করতেন। ২০০৯ সালে ধানমন্ডির ম্যারিয়ট কমিউনিটি সেন্টারে ম্যানেজার হিসাবে চাকরি নেন। ২০১৬ সালে জড়ান শিক্ষা ব্যবসায়। অনার্সের সার্টিফিকেট না থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন তিনি। স্কুলে বসেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। জড়িয়ে পড়েন দলীয় রাজনীতিতে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মেয়ের জামাইয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে চষে বেড়ান প্রশাসনের সর্বত্র। স্কুলের শেয়ার বিক্রির নামে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে আন্দোলনের দুই হত্যা মামলার আসামি এই সোহাগ।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি ২০ ফেব্রুয়ারি
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম নিয়ে রিভিউ শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি
বরিশাল বিভাগের সাত জেলায় বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি
অভিষেকের ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে গেল ইংল্যান্ড
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা