৭ জনকে হত্যার পর নিজে জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচরে পৌঁছান আকাশ

এমভি-আল বাখেরা জাহাজে সংঘটিত সাত খুনের ঘটনার মূলহোতা আকাশ মন্ডল ইরফানকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১ সিপিসি ২। জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ স্বীকার করেছেন, সহকর্মীদের হত্যার পর নিজেই জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচরে পৌঁছান তিনি।
বুধবার সকালে কুমিল্লা নগরীর শাকতলা র্যাব কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ সিপিসি ২ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
মেজর সাকিব জানান, আকাশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার দুর্ব্যবহার, বেতন-বোনাসে অনিয়ম এবং কর্মচারীদের প্রতি অবহেলা তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সেই ক্ষোভ থেকেই আকাশ প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে রাখেন।
ঘটনার দিন (২২ ডিসেম্বর) রাতে আকাশ তরকারির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করেন। রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে প্রথমে মাস্টার কিবরিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে অন্যরা বিষয়টি টের পেয়ে যেতে পারে— এমন আশঙ্কায় তিনি একে একে আরও ছয়জনকে হত্যা করেন।
আকাশের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নিজেই জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচরে পৌঁছান। পরদিন সকালে ট্রলারে করে পালিয়ে যান এবং বাগেরহাটের চিতলমারিতে আত্মগোপন করেন।
র্যাব আরও জানায়, আকাশের কাছ থেকে রক্তমাখা জিন্স, মোবাইল ফোন, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অন্য কোনো সহযোগী ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত সোমবার বিকালে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজ আল বাখেরা থেকে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে নিলে আরও দুজন মারা যান।
নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া (৬০), স্টাফ শেখ সবুজ (৩৫), মো. সজীবুল ইসলাম (২৯), মাজেদুল ইসলাম (১৭), আমিনুর মুন্সি (৪১), সালাউদ্দিন (৪০) এবং রানা কাজী।
এ ঘটনায় জুয়েল নামে জাহাজের আরেক স্টাফ গুরুতর আহত হন। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সাত খুনের এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। এদিন রাতেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আকাশ মন্ডলকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃত আকাশ মন্ডল বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার জগদীশ মন্ডল ও মনিকা রানীর ছেলে। আকাশ গত ৮ মাস ধরে এমভি আল আখেরা জাহাজটিতে লস্কর পদে চাকরি করছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন