সঠিক স্কিলের অভাবে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের এসইও ইন্ডাস্ট্রি ধরতে পারছে না বাংলাদেশ!

২০২৫ এ এসে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং এসইও (SEO) ইন্ডাস্ট্রি একটি বিশাল আকার ধারণ করেছে। গ্লোবাল এসইও মার্কেটের আকার বর্তমানে প্রায় ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা দিন দিন আরও বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় দেশ এই বিশাল মার্কেট ধরতে পারছে না কেন? এসইও স্পেশালিস্ট এবং Upgraph এসইও কোম্পানির ফাউন্ডার, শরীফ সিদ্দিকী এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে একটি গভীর বিশ্লেষণ করেছেন।
বাংলাদেশে অনেকেই এসইও-কে শুধুমাত্র 'লিঙ্ক বিল্ডিং' বা 'কীওয়ার্ড রিসার্চ' হিসেবে মনে করেন। কিন্তু এসইও একটি বিশাল ক্ষেত্র। এখানে টেকনিক্যাল এসইও, অন-পেজ অপটিমাইজেশন, কনটেন্ট মার্কেটিং,কনটেন্ট প্ল্যানিং, ব্যাকলিঙ্ক স্ট্র্যাটেজি, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি। শরীফ সিদ্দিকী মনে করেন, বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররা এসইও-র মৌলিক বিষয়গুলো না জেনেই কাজ শুরু করেন, ফলে তারা আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখতে পারেন না।
বাংলাদেশে এখনো মানসম্পন্ন এসইও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাব রয়েছে। শরীফ সিদ্দিকী উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ ট্রেইনাররা নিজেরাও এসইও-র গভীরে যান না। তারা কেবল বেসিক এসইও শিখিয়ে থাকেন। "আমাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের কোর্স এবং সঠিক মেন্টরশিপ।"
এসইও এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ইংরেজির ভূমিকা অনেক বড়। ব্লগ পোস্ট লেখা, গেস্ট পোস্ট করা, বা ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজি দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক ফ্রিল্যান্সার এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে বেশিরভাগই শর্ট-টার্ম গেইন-এর দিকে নজর দেন। তারা বড় মার্কেট ধরার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন না। শরীফ সিদ্দিকী বলেন, "আপনার যদি লং-টার্ম ভিশন না থাকে, তাহলে আপনি এসইও ইন্ডাস্ট্রিতে বড় কিছু করতে পারবেন না।"
অনেক ফ্রিল্যান্সার গ্লোবাল মার্কেটের জন্য কাজ করতে চান, কিন্তু তাদের সঠিক কৌশল জানা নেই। গ্লোবাল ক্লায়েন্ট পেতে হলে প্রফেশনাল প্রোফাইল, পোর্টফোলিও, এবং আন্তর্জাতিক মানের কমিউনিকেশন স্কিল থাকতে হবে।
বাংলাদেশ এই ইন্ডাস্ট্রিতে এগিয়ে যেতে পারে মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করে, যা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম তৈরি করে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষ করে তুলবে। টিম বা এজেন্সি গঠন করলে বড় বড় প্রজেক্ট নেওয়া সম্ভব, এককভাবে কাজ না করে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করা এবং গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার, টপটাল, পিপল পার আওয়ার ব্যবহার করা।
বাংলাদেশি ই–কমার্স এসইও এক্সপার্ট এবং NafisIqbal.com এর ফাউন্ডার নাফিজ ইকবাল বলেন, "আমাদের দেশে টেকনিক্যাল এসইও এবং ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কিওয়ার্ড-কেন্দ্রিক কনটেন্টেই সীমাবদ্ধ থাকি, অথচ ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ওয়েব আর্কিটেকচার, সাইট স্পিড, স্কিমা ইমপ্লিমেন্টেশন, ইউএক্স/ইউআই এবং কনভার্সন অপ্টিমাইজেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।"
বাংলাদেশে এসইও-তে অগণিত সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা, মানসম্পন্ন কাজ, এবং লং-টার্ম ভিশন। শরীফ সিদ্দিকীর মতে, "যদি আমরা সঠিক পথে এগোতে পারি, তাহলে এই ৬৪ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে আমাদের বড় অংশীদার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।"
(ঢাকাটাইমস/২০মে/এমআর)

মন্তব্য করুন