নিয়ম ভেঙে বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ!

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী পাঁচ শিক্ষককে ডিঙিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) যোগসাজশের অভিযাগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৭ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান রিয়াসহ কিছু শিক্ষার্থী তৎকালীন অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইউএনও মাহবুব হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেন। অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলে তিনি ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত জবাব দেন।
পরে ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি সংশোধিত বিধি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক পাঠায়। ২৭ অক্টোবর ইউএনওর যোগসাজশে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে পরে ইউএনও ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান সহকারী অধ্যাপক (সমাজকর্ম) মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ২২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, অত্র কলেজে স্নাতক পর্যায়ে সমাজকর্ম বিষয়ের অধিভুক্তি না থাকায় সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মমতাজ জাহান-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪(ক) এর উপধারা ২(৫) ও (ii) এর বিধি পরিপন্থী। বিধায় বিধি মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক স্নাতক পর্যায়ে স্বীকৃত কোন বিষয়ের জ্যেষ্ঠতম ০১ (এক) জন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
কিন্তু এই চিঠি প্রাওয়ার ১৫ দিন পার হলেও অ্যাডহক কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কলেজের জ্যেষ্ঠতম পাঁচ শিক্ষকের তালিকায় রয়েছেন যথাক্রমে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সমাজবিজ্ঞানের সারমিনা, বাংলা বিভাগের উম্মে হাবিবা, দর্শন বিভাগের উজ্জল কুমার প্রামাণিক ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাহবুব আলমকে বহিষ্কার করা হলে ইউএনও অফিসে আমাকে ডাকা হয়েছিল। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি এবং তার গ্রুপ আমাকে বাদ দিয়ে মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।’
সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সারমিনা বলেন, ‘অর্থনীতি বিভাগের আনোয়ার হোসেনকে ইউএনও অফিসে ডাকা হয়েছিল। মমতাজ জাহানের বাহিনী আনোয়ার হোসেনকে সরাসরি ও ফোনে ভয়ভীতি দেখালে সে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। সেখানে অন্যদের কাউকেই জানানো হয়নি। মমতাজ জাহান জোর করে চেয়ার দখল করে আছে।’
বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি সম্পর্কে আমি জানি। সত্য কি না জানি না। আমাকে সভাপতি ও ইউএনও নিয়োগ দিয়েছে। আমি জোর করে এই চেয়ারে বসিনি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কলেজ পরিদর্শকের কাছে যাব। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাত্র- ছাত্রীর চাওয়াতে মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করেছি। নতুন কমিটি হয়েছে। এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করবে।’
(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন