তিন দিবস ঘিরে জমজমাট গদখালী ফুলের বাজার

ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিন দিবসকে সামনে রেখে নিজেদের ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাদের আশা সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১৩ ধরনের ফুল।
গদখালীতে ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত বাহারি সব ফুল নিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছেন। হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল ফুটে যাওয়া বাজারে ফুলের জোগানও বেশি। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। মাত্র দুই দিন ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা দরে। আজ সেই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা দরে।
ফুলচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে সামনের এই তিন দিবসে অন্তত একশো কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
এদিন বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৮- ১০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, জিপসি আঁটি প্রতি ৪০-৫০ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার ৩০০-৪০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে ৮-১২ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩-৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎসব যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দাম ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফুলচাষি পলাশ হোসেন বলেন, ‘১০ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। গত দুদিন আগে গোলাপের দাম ছিল ৫ টাকা। আজ ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং লাভবান হতে পারবো।’
ফুলচাষি সোহান হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছি। এ বছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এখন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে দিবসগুলোতে দাম আরও বাড়বে এবং লাভবান হতে পারবো।’
কুষ্টিয়া থেকে ফুল কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ হাজার টাকার ফুল কিনেছি। গোলাপ ফুলটা বেশি কিনেছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর বেশি লাভ হবে বলে আশা করা যায়।
গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুল বেচাকেনা বেশি হয়। তিন দিবসকে ঘিরে গদখালী বাজারে ফুলের বেচাকেনা জমে উঠেছে। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দামও ততই বাড়ছে। বাজার দর ভালো পেয়ে ফুলচাষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সকলেই খুশি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করেন চাষিরা। প্রায় ৬ হাজার চাষি এ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত।
(ঢাকা টাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন